ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; শেষ পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত জিআর কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের নিবন্ধন দেয়নি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দেশের এই জরুরি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কারিগরি কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেনি এবং জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের নিবন্ধন প্রদান করেনি।’
প্রায় এক মাস ধরে গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা শেষে গত ১৬ জুন ওষুধ প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় বিএসএমএমইউ। এর ৯ দিন পর বৃহস্পতিবার ওষুধ প্রশাসন জানাল গণস্বাস্থ্যের অ্যান্টিবডি কিট কার্যকরী নয়।
এর আগে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা শনাক্তে র্যাপিড ডট ব্লট কিট উদ্ভাবনের পর ২৬ এপ্রিল তা হস্তান্তরের আয়োজন করে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি), সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান তা গ্রহণ করতে যায়নি।
এই কিটের অনুমোদন দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সরকারের ওষুধ প্রশাসন। তখন তারা বলেছে, সিআরও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (মধ্যস্বত্বভোগী) কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার পর তা তারা অনুমোদন দেবে। তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, কোনো মধ্যস্বত্বভোগী সিআরও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করবেন না। তিনি সরকারের বিএসএমএমইউসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করাতে চান। তবে ওষুধ প্রশাসন বলে আসছিল, সিআরও প্রতিষ্ঠান ছাড়া কিটের কার্যকারিতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই।
এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে নানা আলোচনা-সমালোচনার একপর্যায়ে ওষুধ প্রশাসন বিএসএমএমইউতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তাদের কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার অনুমোদন দেয় ২৯ এপ্রিল।
অনুমোদনের বেশকিছু দিন পর গণস্বাস্থ্য কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা শুরু হয় বিএসএমএমইউতে। এর মধ্যে গত ২ জুন যথাযথভাবে লালা সংগ্রহ সম্ভব না হওয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের দুটি অংশ অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন্টের মধ্যে অ্যান্টিজেন্টের পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বিএসএমএমইউকে চিঠি দেয় তারা। তবে লালা সংগ্রহের জন্য নতুন একটি ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। সম্প্রতি তা বিএসএমএমইউর কাছে জমা দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
আর অ্যান্টিবডি কিটের ফলাফল পাওয়ার ৯ দিন পর ওষুধ প্রশাসন জানাল, তারা এটার নিবন্ধন দেবে না।
এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (২৫ জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ১৬২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৬ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৩ । গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৯টি। শনাক্তের হার ২১.৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮২৯ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন। সুস্থতার হার ৪০.৬৭% এবং মৃত্যুর হার ১.২৮ শতাংশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানানো হয়, পুরুষ ৩২ জন ও নারী ৭ জন। বয়স বিশ্লেষণে জানা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১-৪০ একজন, ৪১-৫০ সাতজন, ৫১-৬০ ৯ জন, ৬১-৭০ ১২ জন এবং ৭১-৮০ সাতজন এবং ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন এবং বাড়িতে ১১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৬৪৫ জনকে। আইসোলেশন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে ৩৭৪ জনকে।
আমাদের বাণী ডট কম/২৫ জুন ২০২০/পিপিএম