গনভ্যুত্থানের চার শহীদের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি ও ১৯ ফেব্রুয়ারিকে সেনবাগ দিবস ঘোষনার  দাবীতে নোয়াখালীর সেনবাগে মানব বন্ধন ও র‍্যালীর  আয়োজন করেছে সেনবাগ লেখক ফোরাম।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সকাল ১০টায় সেনবাগ থানার মোড়,জিরো পয়েন্টের মানব বন্ধন র‍্যালীতে উপস্থিত ছিলেন সেনবাগ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক গন,সামাজিক সংগঠন সেনবাগ পাঠাগার,সাহিত্য সংগঠন সেনবাগ লেখক ফোরাম। আরো  উপস্থিত ছিলেন,সেনবাগ লেখক ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, সেনবাগ লেখক ফোরাম সাধারণ সম্পাদক ও সেনবাগের কাগজ সেনবাগ বুলেটিন সম্পাদক নিজামুদ্দিন খন্দকার, সেনবাগ লেখক ফোরাম সহসভাপতি প্রফেসর মমিন উল্যাহ,সেনবাগ বাজার কমিটি সভাপতি আমান উল্যাহ,আওয়ামীলিগ নেতা ভিপি আবু নাছের দুলাল, সেনবাগ প্রেসক্লাব সভাপতি খোরশেদ আলম,সাধারণ সম্পাদক এম এ আউয়াল,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শায়েস্তানগরী,সিঙ্গাপুর প্রবাসী কবি,সাহিত্যিক জাহঙ্গীর বাবু,সেনবাগ পাঠাগার সভাপতি রফিকুল ইসলাম রবি, সাংবাদিক ডালাস হারুন,আওয়ামীলীগ নেতা আলমগীর,এম এম চৌধুরী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ও উপস্থিত  স্থানীয় জনসাধারন।
আয়োজক সাধারণ সম্পাদকসেনবাগ লেখক ফোরাম ও সম্পাদক সেনবাগ বুলেটিন নিজাম খন্দকার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন,
গণ অভ্যুত্থানের ৫০ বছর পার হলেও মেলেনি সেনবাগের ৪ শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি! ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ গণ অভ্যুত্থানের ৫০ বছর। ১৯৬৯ ’র গণ অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে এদেশের ছাত্র জনতা আবাল বৃদ্ধ বনিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৬ দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা দাবী আদায়ের সংগ্রামে যখন ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন, ঠিক সে সময়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১৭ নম্বর আসামী, নোয়াখালীর কৃতি সন্তান ফ্লাইট সার্জেন্ট জহুরুল হককে ৬৯ ’র ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। এ সংবাদ ছাত্র জনতার আন্দোলনকে আরো বেগবান করে গণ অভ্যুত্থানে রূপ দেয়। মুক্তি পাগল জনতার গণ-আন্দোলন ঠেকাতে পাক-পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসাদ, ঢাকা নব কুমার ইনষ্টিটিউটের ছাত্র মতিউর এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন থামাতে পাকপুলিশ গুলি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকেই হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহাকে। পাক-পুলিশের এ বর্বরতা ও হটকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি এক যুগে ফুসে উঠে। সে দিন সেনবাগবাসীও থেমে থাকেনি। ঝাঁপিয়ে পড়েন আন্দোলনে।
তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এবং মৌলভি দ্বীন ইসলাম, আলী আহম্মদ ভুঁইয়া, রাখাল চন্দ্র বণিক, মরহুম মোস্তফা কামাল (নেতা কামাল) সহ কতিপয় সংগঠক ও ছাত্র নেতার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ড. জ্জোহার হত্যার পর দিন, মানে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় সেনবাগ থানায় কালো পতাকা উত্তোলন ও থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়।গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্র-জনতা একত্রিত হতে শুরু করলে তৎকালীন পাক পুলিশ বেপরোয়া হয়ে জনতাকে লক্ষ্য কর গুলি ছুঁড়ার এক পর্যায়ে সেনবাগ ফাযিল মাদরাসার ৮ম শ্রেণির ছাত্র আবুল কালাম (বাবুপুর) এর তলপেটে গুলি লেগে আবুল কালাম মারা যান। আবুল কালামের মৃত্যুর সংবাদ চর্তুর দিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের ন্যায় মানুষ ছুটতে থাকে সেনবাগ অভিমুখে। মানুষের ঢল দেখে পুলিশ ২য় দফায় গুলি ছুটলে নিহত হন সেনবাগ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র খোরশেদ আলম (মোহাম্মদপুর), সামছুলক হক (জিরুয়া) ও শ্রমিক আফিজুর রহমান (অর্জুন তলা)।
আহত হন ১৫ জন।
 পাক-পুলিশের সেদিনের বর্বরতার তিলক ধারণ করে আজো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন আহত মাষ্টার নাছির উদ্দিন ও জালাল আহম্মেদ। গণ অভ্যুত্থানের সর্বশেষ আন্দোলনটি ছিলো সেনবাগের আন্দোলন।
 ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের পর ২০ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড় যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি সহ সকল বন্ধীকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু সেনবাগে আসেন এবং শহীদ অফিজুর রহমানের কবর জেয়ারত করেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, যাঁদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে জাতি আজ মুক্ত স্বাধীন, ৬৯’র পথ বেয়ে পরবর্তীতে ৭১ ’র স্বাধীকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা।
যাঁরা ¯স্বাধীনতার প্রথম প্রহরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন জাতিকে মুক্ত করার দীপ্ত বাসনায়। আজ তাদের আমরা ভুলতে বসেছি। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল শহীদদের আত্মদানের ৫০টি বছর। কিন্তু কি পেয়েছে শহীদ পরিবারগুলো? আর কিবা পেল আহতের পরিবার। জাতীয়ভাবে যেমনি এদের স্বীকৃতি মেলেনি, তেমনি স্থাানীয়ভাবেও এর কোন স্বীকৃতি আমরা দেখতে পাইনি। প্রতি বছর এ দিনে আমরা নানাভাবে প্রশাসনকে জানান দিয়ে আসছি সেনবাগের এ ৪ শহীদের নামানুসারে ৪টি রাস্তার নামকরণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের নিকট তাদের স্মৃতি ধরে রাখার স্বার্থে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণেরও এক যুগান্তকারী প্রস্তাবনা ছিলো প্রশাসনের নিকট। কিন্তু শহীদের আত্মদানের ৫ দশক পেরিয়ে গেলেও মেলেনি তাদের অবদানের স্বীকৃতিটুকু। যাঁদের রক্তের বদৌলতে আজ আমরা মুক্ত স্বাধীন, পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা, ¯স্বাধীন দেশ, সার্বভৌমত্ব।
আজ ৪র্থ বারের মতো দেশ পরিচালনার মহান দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া তাই বঙ্গকন্যার নিকট সেনবাগবাসীর প্রাণের দাবী ৬৯ ’র ৪ শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ স্থাানীয়ভাবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ৪টি রাস্তার নামকরণসহ আহত-নিহত পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাা করা হোক। এমনটাই আশা করে সেনবাগের আপামর জনসাধারণ।
আমাদের বাণী/আ-আ-হ-মৃধা 
[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/?ref=bookmarks” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।