মোঃ হুমায়ুন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা; জেলার জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে  বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বাড়ী-ঘর, রাস্তা -ঘাট ও  মৎস্য খামার পানির নীচে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩৫ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন।  আকস্মিক বন্যায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জনসাধারণ । প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসন।

বিগত চার/পাঁচ  দিন ধরে থেমে থেমে  বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে দেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার কুশিয়ারা, নলজুর,রত্না ও ডাউকা নদী সহ বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েই চলছে।

আজ বুধবার (১ লা জুলাই ২০২০) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার  কলকলিয়া ইউনিয়নের  নাদামপুর, হিজলা,  কান্দারগাঁও, নোয়াগাঁও, সাদিপুর, কামারখাঁল, জগদীশপুর, কাদিপুর, পাড়ারগাঁও, মোল্লারগাঁও, খাশিলা সুনাওয়াখাই, যোগলনগর,  চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালী, দাসনাগাঁও, হরিনাকান্দি, সমধল, বেতাউকা, গাদিয়ালা, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল, বাঘময়না, আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেচি, মিলিত, মিঠাভরাং, কালাম্বরপুর, ঐয়ারকোণা, ধাওরাই, আটঘর, পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া, ফেচি, কসবা, রমাপতিপুর, মশাজান, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার আলখানাপার, হবিবনগর, ভবানীপুর ও পূর্ব ভবানী পুর সহ প্রায়  ৩০ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। এতে এসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার  ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট এবং মৎস্য খামার। অনেকেই উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে ও বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক রয়েছেন প্রশাসন সহ জন সাধারণ।

উপজেলার বন্যা কবলিত তেলিকোনা গ্রাম নিবাসী মোঃ আলী নুর ও বেতাউকা গ্রাম নিবাসী সাংবাদিক এসএম উমেদ আলী এবং বাবুল মিয়া মেম্বার  সহ অনেকেই জানান,  বাড়ী-ঘর বানের জলে টইটম্বুর।  কলকলিয়া, আশারকান্দি, চিলাউড়া হলদিপুর, আশারকান্দি  ও রানীগঞ্জ ইউনিয়ন এবং পৌর শহর এর বেশ কয়েকটি  গ্রামীণ  সড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর সচিব মোঃ শামসুল আলম বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কলকলিয়া  ইউনিয়ন এর প্রায়  ১৫ টি গ্রামের ৩/৪ হাজার মানিক পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সড়ক পানির নীচে তলিয়ে গেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত রাতে ও আজ সকালের বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার পানি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।  বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে অবহিত করেছি।

উপজেলার আহছানউল্লা মৎস্য খামার, দুধু মিয়ার মৎস্য খামার ও অর্জুন মেম্বার এর মৎস্য খামার আকস্মিক বন্যার জলে তলিয়ে গেছে। এই তিন খামার বানের জলে ভেসে যাওয়ায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ছোট -খাটো প্রায় ৫০ পুকুরের পাড় পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চাষ করা মাছ বেড়িয়ে পড়েছে।

স্কুল শিক্ষিকা সালেহা পারভীন, খাশিলা গ্রাম নিবাসী মোঃ শিপন আহমেদ তালুকদার,  নাদামপুর  গ্রাম নিবাসী মোঃ আজাদ, দাসনোয়াগাঁও জুলহাস মিয়া, বাঘময়না গ্রাম নিবাসী তোফায়েল ও বালিকান্দী গ্রাম নিবাসী মোঃ ইকবাল হোসেন সহ অনেকেই বলেন, মুশলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া ইতিমধ্যে স্কুল আঙ্গিনা সহ বিভিন্ন বাড়ী ঘরে পানি উঠে পড়েছে এবং রাস্তা -ঘাট পানির নীচে তলিয়ে গেছে । ক্রমান্বয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।আকস্মিক বন্যায় আতঙ্কে আছেন। আজো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, জগন্নাথপুর এর বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত আছে।

আমাদের বাণী ডট কম/০১ জুলাই  ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।