ঝিনাইদহে গত ৯ মাসে ১২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় একটি, মহেশপুর উপজেলায় একটি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় একটি ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ধর্ষণের সাথে জড়িতরা আটক হলেও পরে জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসছে। দিন দিন ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জেলাবাসী হতাশা প্রকাশ করেছেন।

পুলিশ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে, গত ১৯ জানুয়ারি উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রীকে খেজুর বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে একই গ্রামের গোলাম নবী মোল্লার ছেলে জুয়েল রানা। ৬ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামে বাক প্রতিবন্ধি (১৪) ধর্ষণের স্বীকার হয়। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর ১৬ মার্চ দুই বন্ধুর সহায়তায় উপজেলা মধুপুর গ্রামের মেহগনি মাঠে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে আশিকুর রহমান নামে এক যুবক জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। গত ২৩ এপ্রিল কালীগঞ্জ উপজেলায় শহরের প্লাস্টিক কারখানা থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দুলাল মুন্দিয়া গ্রামে পৌঁছালে একই গ্রামের মাহাবুর রহমান তাকে পান বরজে নিয়ে ধর্ষণ করে।

২৯ এপ্রিল ভিকটিম নিজেই বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। গত ১১ মে কালীগঞ্জ উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ করেন ভিকটিমের পিতা। এ ঘটনায় পুলিশ ২জনকে আটক করে। এ বছরের গত ১০ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পত্নি পাড়া গ্রামের দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হাত-পা ও মুখ বেঁধে মাঠের ড্রেনের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় ধর্ষক আলামিনের নাম উল্লেখ করে ২জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

গত ১৫ মে মহেশপুর উপজেলার কুল্লাহ গ্রামে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষনের অভিযোগে কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে মহেশপুর থানা পুলিশ। গত ১২ আগস্ট ঝিনাইদহ পৌর এলাকার খাজুরা মাঠপাড়ায় সপ্তম শ্রেনীর এক ছাত্রী (১৪) গনধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।

২০ আগস্ট উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে ৩ বছরের শিশুকে মোবাইলে গেমস খেলানোর প্রলোভোনে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আবদুল কাদের জিলানী নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ২০ আগস্ট বুধবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার হাসিলবাগ গ্রামে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

২৫ আগস্ট ৫ বছরের শিশুকে ফুসলিয়ে ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে আনসার আলী সর্দার নামে ৫০ বছরের বৃদ্ধ এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মাসের ৯ তারিখে উপজেলার একতারপুর গ্রামে ৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন একই গ্রামের মশিয়ার রহমান। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। সর্বশেষ চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কনক কুমার দাস বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সকলকেই আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা রিপোর্ট প্রদান করছি। এ ছাড়া ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিষয়টা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক ভাবে সচেতন হতে হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।