ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্তে অনুষ্ঠিত হলো দুই বাংলার মিলন মেলা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই বাংলার মানুষকে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা সুযোগ করে দেয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন।

স্বজনদের একপলক দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিল লাখো মানুষ। কাটা তারের বেড়া দমিয়ে রাখতে পারেনি রক্তের বন্ধনকে। সীমান্তের এপার-ওপার লাখো মানুষের ভিড়ে এলাকা পরিণত হয় মিলন মেলায়।

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার কাড়িগাঁও বিওপি, কান্ধাল, মলানী, ডাবরী, বেতনা, বুজরুক এবং ভারতের মালদখন্ড, বসতপুর, শ্রীপুর, নারগাঁও, কাতারগঞ্জ ও বোররা সীমান্তে ৩৫৫, ৩৫৬, নম্বর পিলার থেকে শুরু করে ৩৭২ নম্বর পিলার এলাকায় সীমান্তের ১০টি পয়েন্টে তারকাটার এপার-ওপারে দুই বাংলার স্বজনদের দেখা ও কথার বলার সুযোগ হয়। এ সময় কাটা তারের দুপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তারা। ১৫ এপ্রিল

সোমবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক দু-দেশের মানুষদের দেখা করার সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও কিছু জটিলতার কারণে অনুমতি দিতে বিলম্ব হয়। কিন্তু দুই দেশের লোকজনকে ১০টার পর আর ধরে রাখতে পারেনি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই জনগণ ছুটোছুটি শুরু করে স্বজনদের এক পলক দেখার জন্য। মনের জমানো কথা বলার জন্য। দেখার ও কথা বলার ফাঁকে আদান-প্রদান হয় নানা রকমের খাদ্য সামগ্রীর।

তবে স্বজনদের চেয়ে অধিকাংশ মানুষই এসেছেন এ মিলন মেলা দেখতে। ওপারে কোনো স্বজন না থাকলেও মানুষের দেখার আগ্রহের যেন শেষ নেই। এমন মানুষদের জন্য অনেক আপন মানুষকে দেখতে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে স্বজনকে।

ভারতের মালদা জেলার রতুয়া থানায় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ১০ বছর হলো ঠাকুরগাঁও জেলার গজেন চন্দ্র রায়। ১০ বছর পর মিলন মেলায় মেয়ের দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। জামাই ও মেয়ের জন্য কাপড় ও মিষ্টি তুলে দিয়ে মনে স্বস্তি ফিরেছে তার।

জয়পুরহাট থেকে আসা পূর্ণিমা রাণী জানান, সাত বছর পূর্বে আমার ছোট বোন শ্রীমতি রাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সঙ্গে। কিন্তু মিলন মেলা তাদের দুজনকে আবার মুখোমুখি করে দিল।

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির সদস্যরাও নিজেদের মধ্যে অনেকখানি সময় পান কথা বলার এ মেলার মাধ্যমে। তারাও ভাগাভাগি করেন কাটা তাদের দু-পার্শ্বের অভিজ্ঞতা।

বুজরুক সীমান্তের বিজিবির সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, সীমান্তে ঘটনা না ঘটলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বসার সুযোগ পায় না। বসলেও কথা হয় সমস্যা নিরসনে। অভিজ্ঞতা বা অজানা কিছু জানার সময় মিলে না। মিলন মেলায় দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ হয় কথা বলার।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমজে আরিফ বেগ বলেন, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মৌখিক অনুমতিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। মিলন মেলায় মানুষের দৃশ্য দেখলেই মনে হয় স্বজনদের থেকে দূরে থাকা কত কষ্টের।

আমাদের বাণী-আ.আ.হ/মৃধা’

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।