বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে গণনায় ধরে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে তিনজন শিক্ষককে রিজেন্ট বোর্ড সদস্য নির্বাচন এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদানের ঘটনাও ঘটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সূত্র জানায়, ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে গত ৯ মে রিজেন্ট বোর্ডের ২১১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকী দের বেসরকারি (ডিগ্রি) কলেজের অভিজ্ঞতা গণনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ড. পিনাকী দের সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে আর বাধা থাকল না। শিগগিরই তাঁকে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

আর ডিগ্রি কলেজের অভিজ্ঞতা গণনায় ধরতে পদোন্নতিসংক্রান্ত বিধিমালায়ও সংশোধন আনা হয়। সেখানে একটি বাক্য যুক্ত করে বলা হয়, ‘অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাকরির অভিজ্ঞতা গণনার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।’

জানা যায়, ড. পিনাকী দে আগেও বেসরকারি (ডিগ্রি) কলেজের অভিজ্ঞতা গণনার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু চারবার তা রিজেন্ট বোর্ড থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিনের নেওয়া বিশেষ কৌশলে তা গ্রহণ করা হয়।

জানা যায়, ড. পিনাকী দে ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যাপক হতে হলে যেকোনো শিক্ষকের কমপক্ষে ১২ বছর শিক্ষকতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তিনি বেসরকারি কলেজের অভিজ্ঞতায় ৯ বছরেই অধ্যাপক হতে চলেছেন।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষক অভিজ্ঞতা গণনার আবেদন করলে রিজেন্ট বোর্ড কমিটি করে দেয়। সে অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়েও বিধি সংশোধন করা হয়েছে। ড. পিনাকী দে বেসরকারি কলেজে ১৫-১৬ বছর চাকরি করেছেন। নিয়ম অনুসারে তার অভিজ্ঞতার একটি অংশ গণনা করা হয়েছে।’

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৮(ঞ)-এর তোয়াক্কা না করে উপাচার্য তাঁর পছন্দের তিন শিক্ষককে একাডেমিক কাউন্সিলের নির্বাচন ছাড়া রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত করেন। এ ক্ষেত্রে আইনে বলা আছে, ‘একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত তিনজন প্রতিনিধি রিজেন্ট বোর্ডে থাকবেন।’ তবে কাউন্সিলের একাধিক সদস্যের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ১৯ জানুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও প্রফেসর এ এস এম সাইফুল্লাহ এবং গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পিনাকী দেকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচন ছাড়াই রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য করা হয়।

শুধু তাই নয়, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গ করে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫টি বিভাগের মধ্যে ৯টিই চলছে নিয়ম ভঙ্গ করে।

উপাচার্য ড. মো. আলাউদ্দিনকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নিয়ম অনুযায়ীই বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।