গত কয়েক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে সময়টা একদমই ভালো যাচ্ছে না ডেভিড ওয়ার্নারের। তিন বছরে শতকের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার। সর্বশেষ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ফর্মের এই করুণ দশার মধ্যেও হাল ছাড়ছেন না ওয়ার্নার। ২০২৪ সাল পর্যন্ত লাল বলে খেলে যেতে চান বাঁহাতি এ ওপেনার।
ওয়ার্নার ভারতে চলমান বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ২০২৩ -এ অস্ট্রেলিয়ান স্কোয়াডের অংশ ছিলেন, তার থাকার সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ার আগে এবং কনুই ভেঙে যাওয়ার কারণে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে হয়েছিল। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের সময়ও তিনি আঘাত পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে ছয় উইকেটে।
শেষ পর্যন্ত, ওয়ার্নার ২দিন থেকে তার দায়িত্ব পুনরায় শুরু করতে পারেননি। ডেভিড ওয়ার্নারঃ “আমি ২০২৪ পর্যন্ত খেলছি” যদি নির্বাচকরা মনে করেন যে আমি আমার জায়গার যোগ্য নই, তাহলে তাই হোক, এবং আমি সাদা বলের জিনিসের দিকে ঠেলে দিতে পারি,” ৩৬ বছর বয়সী- সিডনি বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা বলেন।
বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান বলেছেন যে তিনি পরবর্তী অ্যাশেজ সফরে ইংল্যান্ডে খেলার জন্য উন্মুখ। বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন ওয়ার্নার। সিডনি বিমানবন্দরে নেমেই পড়েন সাংবাদিকদের সামনে। দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দেন, যে নির্বাচকরা যদি তাকে ছাড়িয়ে যেতে চান বা লাল বলের ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ারকে ছোট করার চেষ্টা করেন তবে তিনি সাদা বলের ফর্ম্যাটে স্থানান্তরিত করতে আপত্তি করবেন না।
“আমার কাছে পরের ১২ মাস আছে, দলের জন্য অনেক ক্রিকেট সামনে আছে। এবং যদি আমি রান করতে পারি এবং দলের জন্য আমার সেরা পা রাখতে পারি এবং আমি আমার জায়গা ধরে রাখতে পারি, তাহলে এটা খুব ভালো হবে। দলের জন্য। আপনার বয়স যখন ৩৬ , এবং ৩৭ বছর বয়সী তখন এটি সহজ বাছাই করা (সমালোচকদের জন্য)।
আমি এটি আগে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথেও দেখেছি। তাই, আমার জন্য, যদি আমি বাকি চাপ থেকে দূরে থাকি অন্য ছেলেরা, এবং দলের বাকিদের নিয়ে কেউ চিন্তা করে না, আমি এটা করতে পেরে খুশি,” বলেছেন আন্ডারফায়ার অসি ক্রিকেটার।
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে মাঝপথে ফিরে আসা অনেক অসি ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়ার্নার অন্যতম। জশ হ্যাজলউডও তার অ্যাকিলিসের চোট কাটিয়ে ফিরেছেন যখন অ্যাশটন আগার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন।
অস্ট্রেলিয়ার ১৩২ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে ডেভিড ওয়ার্নার হচ্ছেন প্রথম ক্রিকেটার যিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার কোনরূপ পূর্ণ অভিজ্ঞতা ছাড়াই জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস, সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এবং সিডনি থান্ডারের পক্ষ হয়ে খেলছেন।
আইপিএলঃ
ওয়ার্নার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। তিনি তিনটি আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে অরেঞ্জ ক্যাপ লাভ করেন এবং ৫,০০০ এর অধিক রান করেন। ২০২০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ওয়ার্নার সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক হিসেবে কেন উইলিয়ামসনের স্থলাভিষিক্ত হন।
৮ই অক্টোবর ওয়ার্নার আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন। এই ম্যাচে তিনি ৪০ বলে ৫২ রান করেন এবং তার দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ৬৯ রানের জয় পায়। ১৮ই অক্টোবর ওয়ার্নার প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় এবং সবমিলিয়ে ৪র্থ খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে ৫০০০ রান সম্পন্ন করেন। এই ম্যাচে তিনি ৩৩ বলে ৪৭* রান করেন কিন্তু তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে সুপার ওভারে হেরে যায়। এছাড়া তিনি সবচেয়ে কম ইনিংস (১৩৫) খেলে ৫,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটঃ
ঘরোয়া ক্রিকেটে তার এ সাফল্যের প্রেক্ষিতে জানুয়ারি, ২০০৯ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ার টুয়েন্টি২০ দলে অন্তর্ভুক্ত হন। ১১ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অভিষিক্ত হন। টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধ-শতক করেন ৪৩ বল ৮৯ রান যাতে ৭টি চার ও ৬টি ছক্কার মার ছিল। ওয়ার্নার ক্রিস গেইলের শতকের চেয়ে মাত্র ১১ রান দূরে ছিলেন। অভিষেকে তার ৮৯ রান ছিল টুযেন্টি২০ আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ও পঞ্চম সমতাসূচক সর্বোচ্চ স্কোর।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে টি২০-তে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ২৯ বলে ৬৭ রান করেন। তার ৫০ রান আসে মাত্র ১৮ বলে। এর ফলে তিনি তার নিজস্ব ১৯ বলের রেকর্ড ভঙ্গ করেন ও যুবরাজ সিংয়ের পর দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধ-শতক করেন। ট্রান্স-তাসমান ট্রফির ১ম টেস্টে শেন ওয়াটসনের আঘাতপ্রাপ্তিজনিত অনুপস্থিতিতে টেস্ট অভিষেক ঘটে ওয়ার্নারের।
১ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার এই অভিষেক। প্রথম ইনিংসে তিনি মাত্র ৩ রান করেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র চার বলে অপরাজিত ১২* রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। পুল শটের মাধ্যমে জয়সূচক রানটি করেন তিনি। ১২ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে তিনি তার প্রথম শতক করেন। হোবার্টে অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ১২৩* রানে অপরাজিত থাকেন। এর ফলে তিনি ৬ষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন।
২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ১১ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করে । এতে তিনিও অন্যতম সদস্য মনোনীত হন। ৪ মার্চ, ২০১৫ তারিখে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজস্ব সর্বোচ্চ ও অস্ট্রেলিয়ার ওডিআই ইতিহাসে ২য় সর্বোচ্চ ১৭৮ রান সংগ্রহ করেন ।
তার উপরে রয়েছে ২০১১ সালে শেন ওয়াটসনের ১৮৫ রান। এরফলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়া ৪১৭/৬ সর্বোচ্চ রান তোলে। খেলায় তার দল ২৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়সহ বিশ্বকাপে সর্ববৃহৎ জয় পায়। এ জয়টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে দ্বিতীয় বৃহত্তম জয়।
২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড আয়ারল্যান্ডকে ২৯০ রানে হারিয়েছিল। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭-১৮ অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের ভারত সফর এ ব্যাঙ্গালুরু একদিবসীয়তে তিনি ১২৪ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন এবং সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র জয়টি আসে এই ম্যাচে।