মোঃ রফিকুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা; বাংলাদেশের খাদ্য ভান্ডার খ্যাত রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। ধানের শীষের সোনালী সমারোহ বলে দিচ্ছে আউশ ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা।
এবার ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্য মূল্য ও সরকারি প্রণোদনায় বীজ ও সার পেয়ে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রণোদনাসহ সহযোগিতা আরো বেশি করা হলেও আগামীতে কৃষকরা বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান চাষে আরো উদ্বুদ্ধ হবে এটাই প্রতিবেদককে বিভিন্ন সুএে জানানো হয়েছে।
সরোজমিনে জেলার রানীনগর, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, সাপাহার ও মহাদেবপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে সোনালী রোদে বাতাসে দোল খাচ্ছে আউশ ধানের শীষ। অনেক ক্ষেতে সবুজ শীষগুলো সোনালী রঙ ধরতে শুরু করেছে। জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, নওগাঁয় চলতি আউশ ধান চাষ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে। গত আউশ মৌসুমে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। চলতি আউশ মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলা মধ্যে মান্দায় সবচেয়ে ১৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। আউশ ধানের বীজ তলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ১০০ থেকে ১১০ দিন সময় লাগে। তাছাড়া সারের পরিমাণ বোরো এবং আমন ধান চাষ থেকে আউশ ধান চাষে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ খরচ কম হয়। কৃষি বিভাগ আউশের প্রণোদনা হিসেবে এবার জেলায় ৩০ হাজার ২৬৮জন কৃষককের মধ্যে ৫ কেজি উন্নত জাতের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার সরবরাহ করছেন।
বন্যায় জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগ আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের জোয়ানপুর গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, ইরি- বোরো ধানের দাম ভালো পেয়েছি। চলতি বছরে দুই বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি ধানের ভালো দাম পাওয়ার আশায়। এনায়েতপুর ইউনিয়নের গোসাইপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হাসেন জানান, কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার বিনামূল্যে প্রদান করায় আমরা এ ধান চাষ করেছি। ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের পরেই আউশ ধান চাষ করা হয়ে থাকে। ফলে জমি পতিত না থাকায় জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না।
অন্যদিকে প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই প্রায় এই আউশ ধান চাষ সম্পন্ন হয়। এই ধান ঘরে তোলার পর আমন ধান চাষ করা হয়। বছরে ইরি-বোরো, আউশ ও আমন ধান চাষ করায় কৃষকরা বেশি লাভবান হয়ে থাকে। চলতি আউশ মৌসুমে মান্দায় ১৯ হাজার ৭০০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৫হাজার ৬৭০হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১১হাজার ৭০০ হেক্টর পত্নীতলায় ৯ হাজার ২৪০ হেক্টর, নওগাঁ সদরে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৫৩৫হেক্টর, রাণীনগরে ১ হাজার ৪২৫হেক্টর, বদলগাছীতে ১হাজার ৫২০হেক্টর, সাপাহারে ১ হাজার ৮১৫হেক্টর, পোরশায় ১ হাজার ১২০হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, এবার এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। গত বছর প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছিল। এবার গত বছরের তুলনায় ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষকেরা ইরি-বোরো ধানের মতো আউশ ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে আগামীতে এ উপজেলায় আউশ চাষে রেকর্ড সৃষ্টি হবে। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। কৃষকরা যতক্ষণ ফসল ঘরে না তুলছেন ততক্ষণ কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাবেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জানান, আউশ ধান চাষে তেমন সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় না। নওগাঁয় আউশ মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকদের মধ্যে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ধান বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকরা বেশি করে আউশ ধান চাষ করেন। বন্যায় জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগ আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।ফলে কৃষকরা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট রা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আমাদের বাণী ডট কম/১৭ আগস্ট ২০২০/পিপিএম