ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; নরসিংদীর মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রকিব। শনিবার (০১ আগস্ট) মধ্যরাতে এক হাজার চামড়া নিয়ে ট্রাক ভাড়া করে রাজধানীর লালবাগের পোস্তার পাইকারি আড়তে এসেছেন।
কিন্তু চামড়া নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে পাইকারি আড়তদাররা চামড়া নিতে অনাগ্রহ দেখান। চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে এ মৌসুমি ব্যবসায়ীর। এক পর্যায়ে গড়ে ১২০ টাকা করে সাতশ চামড়া বিক্রি করে দেন। বাকি তিনশ চামড়া নিয়ে সেখানেই বিক্রির অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু রোববার (০২ আগস্ট) তাকে চামড়া বিক্রি করতে হয় আরও কম দামে।
শুধু আব্দুর রকিবই নন, পাইকারি আড়তদারের সিন্ডিকেটের কারণে মাথায় হাত বহু মৌসুমি ব্যবসায়ীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণে এবারও পথে বসেছে বহু মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী। নানা অজুহাত দেখিয়ে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন পাইকারি আড়তদাররা। ফলে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে পানির দামে চামড়া বিক্রি করছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা।
রোববার রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় চামড়ার পাইকারি আড়ত ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
মো. ছানোয়ার হোসেন নামের একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী বলছেন, ‘চামড়া কিনে সব শেষ আমার, মাথায় টুপি পরা, যদি মিথ্যা বলি, আল্লাহ দেখছেন, একেবারে ধরা খেয়েছি। সব চামড়া লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। ’
কথা বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না এ ব্যবসায়ী। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যে চামড়া ২ হাজার টাকায় বিক্রির কথা, সেই বড় চামড়া বিক্রি করছি ২০০ টাকায়। মাঝারি চামড়া ১০০ টাকা, ছোট চামড়া ৫০ টাকা আ ছাগলের চামড়া ১০ টাকা। ’
পোস্তা পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, বড় চামড়া ১৫০ টাকা, মাঝারি ১০০ টাকা ও ছোট চামড়া ৫০ টাকা দরে সংগ্রহ করছেন অড়তদাররা।
লোকমান মিয়া নামের এক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা কার কাছে যাবো, কার কাছে বলবো, আল্লাহ ছাড়া বলার কেউ নেই। ’
তিনি বলেন, ‘এ পেশা ছাড়তে পারি না। ছোট বেলা থেকে এ কাজ করি। গতবছরও চামড়া কিনে ধরা খাই। এবার আরও বেশি লোকসান হয়েছে, পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। ’
বাংলাদেশ ট্যানারি মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘এবার কাঁচা চামড়া লক্ষমাত্রার চেয়ে ৩০-৩৫ শতাংশ কম সংগ্রহ হয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কম হয়েছে। ’
কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেউ এক্সপার্ট না। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা সম্ভব না। কেউ অভিজ্ঞ না। লাইসেন্সও দরকার। সরকার পলিসি নিয়েছে, কিন্তু আমাদের উপর এপ্লাই করেনি। সরকারকে কাঁচা রপ্তানির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। ব্র্যান্ড ও বায়ার নিয়ে আসতে হবে। বলতে হবে আমাদের এই কাঁচা চামড়া আছে। ’
আমাদের বাণী ডট কম/০২ আগস্ট ২০২০/পিপিএম