নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে প্যানেল করে নিয়োগের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে চাকরি প্রার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ সালে সারাদেশ থেকে প্রায় ২৪ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য হতে ৫৫ হাজার ২শ ৯৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ।

আজ মঙ্গলবার (০৩ মার্চ ২০২০) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচি পালনে করে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল চাই বাস্তবায়ন কমিটি’র ব্যানারে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা।

জাতীয় প্রেসকাল্বের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না। এছাড়া ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেলিন তিনি। তাই আমরা আশা করি, মুজিববর্ষে এই ৩৭হাজার চাকরিপ্রার্থীকে প্যানেল করে নিয়োগ দিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অনেকাংশ বাস্তবায়ন হবে। কারণ, দেশের ৬১টি জেলার সব উপজেলার যোগ্য প্রার্থীরাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘শিক্ষার মূলভিত্তি’ ধরে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৩৭হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছিলেন, যা ছিল শিক্ষিত জাতি ও দেশ গঠনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যার ফলশ্রুতিতে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে তার আদর্শ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের জোড়ালো দাবি, তার পিতার মতো যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৩৭ হাজার মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী বেকার ও তাদের পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবেন।

স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার সময় সেশন জটের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, আমাদের পড়ালেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চরম সেশন জট ছিল। অন্যদিকে, সার্টিফিকেট পাওয়ার পর হাইকোর্টের রিট জটিলতার কারণে ২০১৪-২০১৮ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি হয়নি। এমনকি ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও হয়নি। যদিও বর্তমানে চরম শিক্ষক সংকট বিদ্যমান। অথচ আগে ৬ মাস পর পর সহকারী শিক্ষক ও ২ বছর পর পর প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। তাই আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এসময় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়ায় এটাই তাদের শেষ সুযোগ বলেও উল্লেখ করেন তারা।

তারা আরও বলেন, মেয়েদের জন্য এইচএসসি পাসে চাকরিতে প্রবেশের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি এই প্রাথমিকের নিয়োগ। এরপর থেকে মেয়েরা আর স্নাতক পাস ছাড়া আবেদন করতে পারবেন না। উক্ত নিয়োগে প্রাথমিকভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকে আবার অন্য চাকরিতে যোগদানের সুপারিশ পাচ্ছেন, ফলে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন না। আবার যথেষ্ঠ শূন্য পদও রয়েছে। জাতীয় সংসদের তথ্য মতে, ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার এবং বর্তমানে তা প্রায় ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একটি নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় দেড় থেকে ২ বছর লেগে যায়। এছাড়াও পিটিআই, বিপিএড, মাতৃজনিত ছুটি, চিকিৎসা জনিত ছুটি ও বদলি জনিত কারণে সারা বছরেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পদ শূন্যই থেকে যায়। ফলে তীব্র শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করলে নিয়োগ বাণিজ্য ও কালক্ষেপন বন্ধ হবে। শূন্য পদের ভিত্তিতে সময় মতো উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়াও সম্ভব হবে, যা বর্তমান সময়ের জন্য অপরিহার্ বলেও উল্লেখ করেন তারা।

আমাদের বাণী ডট কম/০৩ মার্চ ২০২০/টিপিসি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।