চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রধান কোচ জুলিয়ান উড বললেন, এই টুর্নামেন্টে ভালো করলে আইপিএল ও অন্যান্য লিগে দল পাওয়ার সুযোগ থাকে। বিপিএল হলো ক্রিকেটারদের আইপিএলের পথে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ির ।
এবারের আসর শুরুর আগেই বিপিএলের গায়ে লেগেছে নানান সমালোচনার দাগ। দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রশ্ন তো লেন বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে। ডিআরএসের বদলে ব্যবহৃত এডিআরএস নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ডাচ পেসার পল ফন মিকেরেন। এসবের মধ্যেও বিপিএলের ইতিবাচক দিক খুঁজে নিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্রধান কোচ জুলিয়ান উড।
টাইগারদের কোচ হতে প্রস্তুত জুলিয়ান উড
টাইগারদের সঙ্গে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করতে চান জুলিয়ান উড। বিসিবি প্রস্তাব দিলে লুফে নিতে প্রস্তুত সাবেক এ ইংলিশ ক্রিকেটার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হেডকোচ হিসেবে দায়িত্বে এবারের বিপিএলে। আফিফ, ইরফান শুক্কুরদের স্কিল বাড়ানো নিয়ে কাজ করছেন জুলিয়ান উড।
২০২১ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হতশ্রী দশা, ২২ আসরে দু’জয়। পরপর দু’বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে টাইগারদের পারফরম্যান্স মন ভরাতে পারেনি। বিশেষ করে সহযোগী দেশগুলো যেখানে বড় দলগুলোকে চোখরাঙানি দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট হতাশার জন্ম দিয়েছে।
জেমি সিডন্সের পাওয়ার হিটিং তত্ত্ব খুব একটা কাজে আসেনি। তাই গেল বছর শ্রীরামকে নিয়োগের আগে জুলিয়ান উডকে চেয়েছিল বিসিবি। বোর্ডের যোগাযোগের ঘাটতির কারণে সেসময় না হলেও এখন টাইগারদের পাওয়ার হিটিং কোচ হতে রাজি জুলিয়ান উড।

৫৪ বছর বয়সী এই কোচ পরিচিত পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে। বিপিএলের গত আসরে এই দায়িত্ব দিয়েই তাকে বাংলাদেশে আনে সিলেট সানরাইজার্স। এর আগে তিনি কাজ করেন বিগ ব্যাশ ও পিএসএলে। বিপিএলের পর আইপিএল ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের হয়েও কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় উডের।
এবার তিনি এসেছেন প্রধান কোচ হয়ে। বিশ্বের নানান ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য টুর্নামেন্টের সঙ্গে বিপিএলের বৈসাদৃশ্য ধরতে পেরেছেন উড। তার মতে, বিপিএলে কাজের পরিবেশ অন্য যে কোনো টুর্নামেন্টের চেয়ে অস্থিতিশীল। তাই এখানে কাজ করার চ্যালেঞ্জ জিতলে পরের কাজটুকু সহজ হয়ে যায়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দলের অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে উড বললেন, বিপিএলের মতো টুর্নামেন্ট থেকেই তরুণ ক্রিকেটাররা সামনে এগোনোর রসদ পায়।
বিপিএল হলো ক্রিকেটারদের আইপিএলের পথে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি
“আমার মতে আইপিএল সবকিছুর চূড়ায়। এটা অসাধারণ। সেখানে যে মানের ক্রিকেট হয় তা অবিশ্বাস্য। ওখানের সংশ্লিষ্টরা অনেক মানসম্পন্ন। সেদিক থেকে বিপিএল হলো ভিত গড়ার মতো। যে কোনো তরুণ ক্রিকেটারের জন্য আইপিএল পর্যন্ত যাওয়ার পথে এটি সিঁড়ির মতো। যদি এখানে ভালো করে তাহলে… যেমন গত বছর (চট্টগ্রামের হয়ে) বেনি হাওয়েল ভালো করেছিল। এরপর সে পিএসএল খেলতে যায়, আইপিএলেও দল পায়। পাঞ্জাবের হয়ে যদিও ম্যাচ খেলতে পারেনি, তবে সেখানে ছিল।”
“এটি (বিপিএল) তাই দারুণ মঞ্চ। আমার মতে, যেভাবে বিপিএল পরিচালিত হয়, এই পরিবেশে কাজ করতে পারলে… কারণটা হল, এখানে সবকিছু অস্থির, সব জায়গায় দর্শক-ভক্তের সমাগম। এর মধ্যেও আপনাকে নিজের কাজ করে যেতে হবে। কোচ বা খেলোয়াড় হিসেবে যদি এই পরিবেশে কাজ করতে পারেন, তাহলে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় কাজ করতে পারবেন। তো আমার মতে, আইপিএলসহ অন্যান্য লিগ খেলার জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের দারুণ মঞ্চ এটি।”
উডের কোচিং ক্যারিয়ারেও ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে বিপিএল। গত আসরে সিলেট সানরাইজার্সের পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর কাজ করেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের হয়েও।
এই যাত্রায় বিপিএল ও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন উড।
“এটা দারুণ। আমি আইপিএলেও কাজ করেছি। পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে আমার পরিচিতি আছে, যেটা দারুণ। এখন মূলত পাওয়ারের খেলা। কিন্তু একইসঙ্গে আমি ব্যাটিং কোচও, যে কিনা পাওয়ার হিটিংয়ে বিশেষজ্ঞ। গত বছর এখানের (বাংলাদেশ) সংবাদমাধ্যম আমার প্রতি দারুণ ছিল। এরপর আইপিএলে কাজ করেছি, আরও অনেক জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি। এটা ভালো।”
কোচ জুলিয়ান উড
প্রথমবার হেডকোচের ভূমিকায় এ ইংলিশ। এর আগে আইপিএলে কাজ করেছেন পাঞ্জাব কিংসের হয়ে। পিসিবির হাই পারফরম্যান্সেও কিছুদিন ছিলেন। তবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে কাজ করাটা উপভোগ করছেন। আফিফ, ইরফান শুক্কুরদের মতো ক্রিকেটারদের স্কিল বাড়াতে কাজ করছেন উড।
সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার জুলিয়ান উড বলেন, আগেরবার আমি বিজয়কে নিয়ে কাজ করেছিলাম। এবার আমি আফিফ, ইরফানদের নিয়ে করছি। ওরা শারীরিকভাবে শক্তিশালী না। তবে টাইমিং আর বডি মুভমেন্টটা কাজে লাগিয়ে বড় শট খেলা যায়। সেটাই ওরা রপ্ত করার চেষ্টা করছে।
তারকা ক্রিকেটারদের চাইতে তরুণদের নিয়ে কাজ করতে বেশি উৎসাহী জুলিয়ান উড। সে সুযোগটা কি নিতে পারবে বিসিবি?