বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের লক্ষে ২০০৫সালে গঠিত হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।যার প্রধান একজন চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব)।২০০৫সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা ছিল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধন পাশ।প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ প্রদান করতেন। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন সনদধারীদের শিক্ষক নিয়োগ দিতেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি। ২০০৫এর পুর্বে শিক্ষক হতে একাডেমিক সনদ ব্যতীত কোন নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন ছিল না।

যাই হোক ২০১৫ সাল থেকে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা খর্ব করে,সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষক নিয়োগের পুর্ন ক্ষমতা প্রদান করেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে। প্রথম চক্রের নিয়োগ ২০১৫ সালে দ্বিতীয় চক্রের নিয়োগ ২০১৮ সালে যথাক্রমে ২৫০০০ ও ৪০,০০০। উভয় নিয়োগে ইনডেক্সধারীদের জন্য কোন অপশন না থাকায়, প্রার্থীরা আর আবেদন করতে পারে নি।পুর্বে ব্যবস্থাপনা কমিটির অধীন যখন নিয়োগ ছিল তখন নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত প্রার্থী, নিবন্ধিত ইনডেক্সধারী ও অনিবন্ধিত ইনডেক্সধারীদের সমন্বয় যৌথভাবে প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই প্রক্রিয়া ও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।

আগামী ডিসেম্বরে ৩য় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি ও জানুয়ারি ২০২০সালের মধ্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাচ্ছে সরকার তথা এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএ ৩য় পর্যায় মানে পরবর্তী গণবিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে ইনডেক্সধারীদের আবারো বঞ্চিত করার পায়তারা করতে পারে। এটা তাদের নিয়ম যা প্রয়োগের ফলে গতবছর লক্ষাধিক মেধাবী শিক্ষক বঞ্চিত হয়েছে। এ বছরেও এরকম করার পরিকল্পনা হচ্ছে।এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১২ ধারা অনুযায়ী ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু এনটিআরসিএ শুধুমাত্র নিবন্ধিতদের সুযোগ দিয়েছে। এনটিআরসিএ ইনডেক্সধারীদের আবেদন বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা না করার ফলে প্রায় লক্ষাধিক ইনডেক্সধারী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যার কারনে মেধাবী শিক্ষকরা বন্দীদশা জীবন পার করতেছে ; এই পেশার প্রতি অনীহা বাড়তেছে;শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যদি প্রায় ৬০হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়ে সকল পদ পুর্ন হয়ে যায় তখন নিজ এলাকায় কিংবা পছন্দমত জায়গায় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে যাওয়া একেবারে অনিশ্চিত হয়ে যাবে।বদলি চালু হলেও শুন্য পদের অভাবে সারা জীবনে আর সেই সুযোগ পাবেন কি না আল্লাহ জানে।মনে রাখবেন সময়ের এক ফোড়,অসমের দশ ফোড়।

এই গনবিজ্ঞপ্তির মধ্যে ইনডেক্সধারীদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে গন্য করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার সুযোগ দিতে হবে।বিজ্ঞপ্তির পুর্বে ইনডেক্সধারীদের (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) জন্য আলাদা সার্কোলারের মাধ্যমে সুযোগ দিতে হবে।পিয়ন পদ থেকে শুরু করে অধ্যক্ষ পর্যন্ত সকল শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে বদলি হবার সুযোগ দিতে হবে।
ইনডেক্সধারীদের সুযোগ দিলে পদসংখ্যা কমবে না,নতুনরা সুযোগ পাবে।কর্মচারী ও প্রশাসনিক পদে NTRCA মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা করলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ /পরিবর্তন সম্পন্ন হবে বিধায় দেশ,রাষ্ট্র, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার প্রশংসিত হবে।নতুবা সরকারের অর্জিত সম্মান ধুলিস্যাত হবে,বদনাম হবে।শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করবে।বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথে নেমে আসতে পারে,মহামান্য হাইকোর্টে মামলা, রীট হতে পারে,অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে ও বিভিন্ন সংকট সৃষ্টি হতে পারে।সকল সমস্যা সমাধান, সংকট নিরসনে শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, ও মাননীয় উপমন্ত্রীসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের প্রতি সাড়ে পাচ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউমানিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বদলি পদ্ধতি চালু হলে যে পরিবর্তন আসবে :

সীমাহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি ব্যবস্থা চালু একান্ত জরুরী। শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমশ নিম্নগামীর পরিবর্তে ঊর্ধ্বগামী করতে, বিশ্ব মানের শিক্ষা অর্জন করতে বদলি ব্যবস্থা চালুর বিকল্প নেই।স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মুলক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২০সালের জানুয়ারি থেকে সরকারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনলাইনে সফটওয়্যার মাধ্যমে বদলি পদ্ধতি চালু করতে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় সিনিয়র সচিব (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি। বদলি ব্যবস্থা চালু হলে যে সুবিধাগুলো নিশ্চিত হবে———

১।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হবে২।শিক্ষকদের মধ্যে গতিশীলতা আসবে ৩।শিক্ষকরা স্থানীয় পলিটিক্স এ জড়াতে পারবে না ৪। এ সি আর চালু করা সহজ হবে।৫। শিক্ষকদের প্রাইভেট – কোচিং বন্ধ হবে।৬। শিক্ষার মান বাড়বে। ৭। ম্যানেজিং কমিটির নির্যাতন কমবে । ৮। ভালো শিক্ষকের কদর বাড়বে ।৯। শিক্ষকতায় ভালো শিক্ষক আসবে। ১০। ভালো- মন্দ শিক্ষক বদলির মাধ্যমে শিক্ষার মান সমন্বয় করা সম্ভব হবে। ১১। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মান প্রায় সমান হবে। ১২। শিক্ষকরা রাজনীতিমুক্ত থাকতে পারবে। ১৩। শিক্ষকদের শাস্তিমূলক বদলী করা সহজ হবে। ১৪। শিক্ষকদের কর্মততপরতা বাড়বে।১৫।শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে ও একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাঠদান বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে।১৬।শিক্ষকদের চাকরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।১৭।ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অযাচিত হস্তক্ষেপ, বহিষ্কার ও চাকরীচ্যুত কমবে।

বদলি চালু হলে প্রতিষ্ঠানের একনায়কতন্ত্র, নৈরাজ্য, শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ হবে, শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে ও সরকারের কোন বাজেট বরাদ্দ করতে হবে না।

বদলি ব্যবস্থা না থাকায় চাকরির নিরাপত্তা নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু শিক্ষক দুর্নীতি, একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন। আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশে বদলি ছাড়া এরকম কার্যক্রম চলতে পারে না। একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে অনেকে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত হচ্ছেন; যা সকল শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে। কিছু শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজশে গড়ে ওঠছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা, গাইডবুক ও নোটবাণিজ্য করার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের পেছনে শ্রম ও মেধা দিতে অনিহা বা ব্যর্থ হচ্ছেন।

বদলি বাস্তবায়ন কমিটি বদলির দাবিতে কাজ করছে।সকল বদলি প্রত্যাশীদের প্রতি অনুরোধ ঐচ্ছিক বদলির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে সরকার বাহাদুরের দৃষ্টি অাকর্ষণ করি। সকলেই একতাবদ্ধ হোন।এবার বদলি চালু না করতে পারলে বদলি প্রত্যাশীরা আজীবন এক জায়গায় শিকলে আবদ্ধ হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হবে।

প্রভাষক (ইংরেজি),  সমষপুর কলেজ ও সদস্য সচিব, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন কমিটি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।