বিপিএল খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান রবিন দাস, যার শেকড় এদেশেই। রবিন বিপিএলে খেলবেন ঢাকা ডমিনেটরসের হয়ে। ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে পৌঁছেছেন তিনি, আজ থেকে যোগ দিবেন দলের ক্যাম্পে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশী ইংলিশ ব্যাটসম্যান রবিন দাস
২০০২ সালে ইংল্যান্ডের লেটোনস্টোনে জন্ম রবিনের। তার বাবা মৃদুল দাসের জন্ম বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে। তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর অনেক পরে রবিনের জন্ম হয়।
রবিন পড়াশোনা করেছেন বেন্টউড শহরে, সেইসাথে কাউন্টি খেলছেন এসেক্সের হয়ে। এসেক্সের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দুর্দান্ত এক দ্বিশতক করেছিলেন। সেই ম্যাচে এসেক্সের প্রতিপক্ষ ছিল ব্রেন্টউড ক্রিকেট ক্লাব।
বাংলাদেশের ক্রিকেটেও রবিন দাস খুব অপরিচিত কেউ নন। ২০২০ সালের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের খেলোয়াড় ড্রাফটে রবিনের নাম ছিল, পরে যদিও খেলার সুযোগ পাননি। ২০১৯ সালে রবিন এসেক্সের ‘একাডেমি প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ সম্মান পান।
এমনিতে ব্রিটিশ নাগরিক হলেও রবিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। ২০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ড জাতীয় দলের মূল একাদশে এখন পর্যন্ত সুযোগ না পেলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে বারোতম খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মাঠে।
ইংলিশ ব্যাটসম্যান রবিন দাস
সম্প্রীতি এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি’- ভাঙা উচ্চারণে বললেন রবিন দাস।
“আমি অনেক বেশি রোমাঞ্চিত। এটা আমার বাবার দেশ। তিনি আমাকে বাংলাদেশের বাড়ির কথা বলতেন। তিনি খুবই খুশি যে আমি এই টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি।”
বিদেশি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশে আসার পর দুই-একটি বাংলা বাক্য বলার চেষ্টা করা নতুন কিছু নয়। তবে ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে খেলতে আসা ইংলিশ ব্যাটসম্যান রবিনের ব্যাপারটি একটু আলাদা। বিদেশি হলেও তার শেকড় যে বাংলাদেশে!
২০২০ সালে শুধু দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে হওয়া বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির ড্রাফটে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি বাংলাদেশি হিসেবেই। সেবার কেউ তাকে নেয়নি। এবার বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়েই খেলার সম্ভাবনা জেগেছিল তার। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনেক দূর এগোনোর পর শেষ পর্যন্ত আর চুক্তিটি হয়নি।
তবে সিলেটের সুযোগ না পেলেও বিপিএলের দুয়ার ঠিকই খুলেছে তার জন্য। ঢাকার হয়ে খেলতে গত শুক্রবার বাংলাদেশে আসেন রবিন। বাবার বাড়িতে ঘুরতে আগেও বেশ কয়েকবার এই দেশে এসেছেন তিনি। তবে খেলার জন্য এবারই প্রথম এলেন ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্লাব এসেক্সের তরুণ এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান।
গত বছরের অগাস্টে এসেক্সের মূল দলে অভিষেকের পর এবারই প্রথম বিদেশি কোনো লিগে খেলার অপেক্ষায় রবিন। আর এই সুযোগটি বাংলাদেশের টুর্নামেন্টে হওয়ায় আবেগের দোলাচালে ভাসছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
যে কোনো প্রবাসী ক্রীড়াবিদের কাছে অবধারিত প্রশ্ন থাকে, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান? রবিন এখানে আবেগের স্রোতে সাঁতরে বললেন বাস্তব লক্ষ্যের কথাই।
“এখন আমার স্বপ্ন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা। তবে আমি ভবিষ্যতের জন্য কোনো দরজাই বন্ধ করতে চাই না। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলাই স্বপ্ন।”
“আমি ইংল্যান্ডে বড় হয়েছি। ওখানে এসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলি। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে সম্ভব হলে এই দেশের হয়েই আমি খেলতে চাই।”
ব্রিটিশ বাংলাদেশী ইংলিশ ব্যাটসম্যান রবিন দাস
রবিনের এই স্বপ্ন অবান্তর কিছু নয়। ২০১৯ সালে পেয়েছেন এসেক্সের ‘একাডেমি প্লেয়ার অব দা ইয়ার’ সম্মাননা। বয়সভিত্তিক পেরিয়ে গত বছর খেলে ফেলেছেন এসেক্সের মূল দলেও। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে টেস্ট ম্যাচে ফিল্ডিং করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।
গত বছরের জুনে ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ডের মধ্যকার লর্ডস টেস্টে বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে ছিলেন রবিন। ইংল্যান্ডের মূল স্কোয়াডে না থাকলেও উঠতি প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে তাকে দলের সঙ্গে রাখা হয়েছিল জরুরী প্রয়োজন মেটানোর জন্য। এক পর্যায়ে সুযোগ হয় ফিল্ডিংয়ের। সেই রোমাঞ্চ এখনও স্পর্শ করে তাকে।
“সেটি আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ ছিল। দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক কিছু শিখেছি। লর্ডসের মতো মাঠে টেস্ট আবহের মধ্যে থাকতে পারা দারুণ। ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কিছু বিষয় শিখেছি। সবমিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।
ভাবনার জগতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট থাকলেও বাংলাদেশের খেলাও নিয়মিত দেখেন রবিন। গত বছর তিন সংস্করণ মিলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯২১ রান করা লিটন দাস রবিনের প্রিয় ক্রিকেটার।