সহকারী সচিব মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে তার স্ত্রী হামিদা বেগম পারিবারিক পেনশন চেয়ে জেলা পর্যায়ে আবেদন করেন ২১ এপ্রিল। সেটি বুধবার চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে। আবেদনটি পটুয়াখালী জেলা থেকে মন্ত্রণালয়ের শাখা পর্যায়ে আসে ২৬ মে। এর দু’দিনের মাথায় সব ধাপ পার হয়ে ২৯ মে নথি অনুমোদন করেন সচিব ফয়েজ আহম্মদ। অর্থাৎ মন্ত্রণালয় পর্যায়ে পেনশন ফাইল নিষ্পত্তি হল মাত্র চার দিনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণ পেনশনের জন্য আবুল কাসেম বোরহান উদ্দিন নামে ৮৫ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা আবেদন করেন ২৮ এপ্রিল। সেটিও বুধবার চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়। এভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তার সেবা প্রদানের কাজে নজিরবিহীন রেকর্ড সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

সূত্র বলছে, শুধু মন্ত্রণালয় নয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজি প্রেস ও কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডসহ সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো সেবাপ্রার্থী যাতে ন্যূনতম হয়রানি বা নাজেহালের শিকার হতে না হয়, সে জন্য বিশেষ তদারকির ব্যবস্থা নিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

বুধবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, চাকরিজীবনে শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রতিটি কর্মস্থলে নিজেকে সেবক মনে করেছি। যেহেতু জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন-ভাতা হয়, তাই প্রকৃতপক্ষে নিজেকে জনগণের সেবক প্রমাণ করার চেষ্টাটা সব সময় ছিল। এখন সচিবের দায়িত্বে এসে নিজেকে গর্বের সঙ্গে আরও বড় সেবক মনে করি। যদিও এটি একটি রেগুলেটরি মন্ত্রণালয়। সরাসরি সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। এখানে মূলত আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্ভিস দিয়ে থাকি। এর মধ্যে পেনশন একটি বড় বিষয়।

তিনি বলেন, প্রত্যেককে বলা আছে- দিন শেষে কাজটাই আসল। তাই কোয়ালিটি কাজ দেখতে চাই। অর্থাৎ কোনো ফাইল পেন্ডিং রাখা চলবে না। যত দ্রুত সম্ভব সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে ফাইল নিষ্পত্তি করতে হবে। এর ফলে এখন পেনশন থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি কাজ দ্রুততার সঙ্গে হচ্ছে।

জানা গেছে, আকস্মিক পরিদর্শনের পাশাপাশি জোরদার মনিটরিং ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ফলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি দফতরে আগের তুলনায় অনেক গতি ফিরেছে। যেখানে আগে পেনশন ফাইল মাসের পর মাস পড়ে থাকত, কোয়ারি দেয়ার নামে হয়রানি করা হতো; এখন তার কিছুই নেই।

এ ছাড়া ১৫৪ জন কর্মকর্তা নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের এ মন্ত্রণালয়ে এখন ই-ফাইলিংয়েও বেশ সাফল্য এসেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের জরিপে প্রতি মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অবস্থান হয় দ্বিতীয়, না হয় তৃতীয়। কাজের ভলিউম বেশি না হলে নির্ঘাত এ মন্ত্রণালয় ই-ফাইল নিষ্পত্তিতে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারত।

কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের সব সেবাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আনা হয়েছে। অনুদান বৃত্তিসহ সবকিছুর আবেদন এখন নেয়া হয় অনলাইনে। ফিরতি সেবাও নিশ্চিত করা হয় একই পদ্ধতিতে। অনুমোদিত বরাদ্দ কিংবা অনুদান একেবারে সেবা গ্রহীতার ব্যাংক হিসাবে চলে যায়। অর্থাৎ ঘুষ নেয়া তো দূরের কথা, ঘুষ চাওয়ার পথও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরে (বিজি প্রেস) এখন সব দিক থেকে স্বচ্ছতা অর্জন করার পথে। এখানে ধাপে ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একই অবস্থা পরিবহন পুলে। সাভারে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকেও সব বিষয়ে জবাবদিহি করতে হয়।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘিরে ইতঃপূর্বে তদবির ও বদলি বাণিজ্যের যেসব অভিযোগ চাউর ছিল, সেটি এখন শূন্যের কোঠায়। কোনো নীতিবহির্ভূত তদবিরের সুযোগ নেই। পদাধিকারবলে গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদোন্নতি ও পদায়ন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মেধা যোগ্যতা মূল্যায়নের ওপর কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।

কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন সজ্জন ব্যক্তি। উচ্চশিক্ষিত প্রতিমন্ত্রী নিজেও একজন দক্ষ মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি এ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকে বিদ্যমান সেবার মানোন্নয়ন ছাড়াও ক্রিয়েটিভ কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। পদোন্নতি বঞ্চনার যৌক্তিক অভিযোগ থেকেও বেরিয়ে আসতে চান। অর্থাৎ সবাই পদোন্নতি পাবেন না। কিন্তু যিনি পাবেন না তার পেছনে যেন সুনির্দিষ্ট কারণ থাকে। এ বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। যুগান্তর

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।