একাত্তর সালে কুষ্টিয়ার জেলার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের ডাঁশা গ্রামের চাষী ক্লাব সংলগ্ন যুদ্ধের কাহিনি নির্ভর গবেষণা মূলক গ্রন্থ ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’। এটি রচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ইমাম মেহদী।

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’ গ্রন্থ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। শিল্পবাড়ির আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলা শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিনের নিজ বাসভবনে এই গ্রন্থ বিতরণ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত শেষে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি কামনা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রন্থের লেখক সাংবাদিক ইমাম মেহেদী।

ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা ও খোকসা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর শিশির কুমার রায়। প্রধান অতিথি বলেন এই গবেষণা কাজটি খুবই কষ্টসাধ্য নির্মোহ একটি মূল্যবান কাজ। গবেষক দিনে দিনে এই কাজটি করে আজ আমাদের মাঝে ইতিহাস তুলে এনেছেন। যে কাজ ৪৮ বছরে হয়নি সেই কাজ ইমাম মেহেদী করেছে। এদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের। বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে সকল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা একাত্তর সালে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এই দেশের মালিক তারাই। তারা স্বাধীন করে দিয়েছে বলেই আজ আমরা কথা বলতে পারছি। সুন্দর বাংলাদেশ পাচ্ছি। মায়ের ঋণ যেমন শোধ হয় না ঠিক তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের এই ঋণ আমরা কোনদিন শোধ করতে পারবো না। বিশেষ অতিথি ধোকড়াখোল কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক মো. দবির উদ্দিন বলেন, আমি এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এতদিন যাদের নাম শুনেছি আজ তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি। তাদের ইতিহাস বইতে লিপিবদ্ধ করেছে আমারই ছাত্র। এই অসাধারণ গবেষণা কাজ করে ইমাম মেহেদী আমাদের সবাইকে ঋণী করে ফেলেছেন।

বিশেষ অতিথি খোকসা উপজেলা সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা শ্রেষ্ঠ মানুষ। যিনি এই গ্রন্থ লিখেছেন তিনিও ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে আমি মনে করি। ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তিদের মাঝে এসে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা গ্রন্থ নিয়ে কথা বলতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। দোয়া করি যারা শহীদ হয়েছেন, মারা গেছেন সেই সকল বীর যোদ্ধাদের আত্মার শান্তির জন্য। যারা জীবিত আছেন আপনারাও ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের মাঝে আরো বেঁচে থাকবেন আজীবন।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পিতা ও মাতার অংশগ্রহণ, অবদানের বিষয়কে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুস সাত্তারের সন্তান, খোকসা উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। যুদ্ধদিনের সেই অদম্য যোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’ গ্রন্থ থেকে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের প্রদর্শক মো. কবিরুল ইসলাম।

যুদ্ধের বিভিন্ন স্মুতিচারণ করেন ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দসু ছাত্তার। বাবা-মা ও পরিবার এবং নটাভাঙ্গা গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতিচারণ করেন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার নটাভাঙ্গা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খুরশীদ আনোয়ার খান। সবাইকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন।

অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মো. আশরাফ আলী। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একাত্তর সালে ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’ যুদ্ধ গ্রন্থটি বিতরণ করা হয় লেখকের পক্ষ থেকে। এসময় উপস্থিতি ছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম আলীর সন্তান ইসহাক আলী, মো. আকাশ হোসেন সহ আরো অনেকেই।

আমাদের বাণী-আ.আ.হ/মৃধা

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।