বগুড়া সংবাদদাতা;  রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে, পাটশিল্প আধুনিকায়ন, করোনায় কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং করোনাকালীন সময়ে শ্রমজীবীদের নগদ সহায়তা প্রদান করতে বাজেটে বরাদ্দের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে আজ শনিবার বগুড়া সাতমাথায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শারীরীক দুরত্ব বজায় রেখে প্রতিকী মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সভাপতি শ্রমিক নেতা কমরেড সাইফুজ্জামান টুটুল, মানববন্ধন চলাকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমরেড এ্যাড. সাইফুল ইসলাম পল্টু, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা শিব সংকর শিবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চন্দ্র দাস মনো, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, দপ্তর সম্পাদক শ্যামল বর্মন, প্রচার সম্পাদক সানোয়ার বাবু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধন-সমাবেশে কমরেড এ্যাড.সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, পাট এবং পাটকল বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত। স্বাধীনতার পর দেশে মোট ৭৭টি পাটকল ছিল। গত ৪৯ বছরে শাসকশ্রেণির দুর্নীতি ও বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর পরামর্শে গৃহীত ভুলনীতির ফলে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ প্রায় ৫০টির বেশি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সারা দুনিয়ায় এখন পলিথিনসহ কেমিক্যাল দ্রব্য বর্জনের ফলে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার ও চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশে অবস্থিত পাটকলগুলোও সরকার বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। করোনা প্রেক্ষাপটে পরিবেশগত কারনে পাট পণ্যের বর্ধিত বাজার বেসরকারি পাটকল মালিকদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছাড়ার উদ্দেশ্যেই রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে- পাট বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যের প্রতীক। শুধু পাটকল শ্রমিক নয় পাট চাষী, পাট ব্যবসায়ী এবং পাটের সঙ্গে যুক্ত আছে কোটি কোটি মানুষ। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী সহ এক বিশাল জনগোষ্ঠী পাট শিল্পাঞ্চলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের ঐতিহ্য ও অর্থনীতির একটি প্রধান খাত পাট শিল্পের জন্য ধ্বংসাত্মক এবং আত্মঘাতী হবে বলে আমরা মনে করি। সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে দেশের চাহিদা পূরণ করেও যে শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, তা বন্ধ করার পরিণতি যে দেশের জন্য ভাল হয় না সেটা আদমজী বন্ধের মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরের বাজেটে পাট শিল্প আধুনিকায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার আহ্বান জানান।

সমাপনী বক্তব্যে কমরেড সাইফুজ্জামান টুটুল বলেন, বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমান কভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরিবেশ বান্ধব এই শিল্পের চাহিদা দেশে এবং বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোর বৃহত্তম জোট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপের পক্ষ থেকে পাট শিল্পকে আধুনিক ও লাভজনক করার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাাবনা তুলে ধরেছিল এবং সরকারের বিভিন্ন মহলে জানিয়েছিল। ফলে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পাট শিল্পকে আধুনিকায়ন করে নতুন উদ্যমে চালু করা হবে। কিন্তু তা না করে পাটকল বন্ধের পদক্ষেপ শ্রমিক ও দেশপ্রেমিক জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও বলেন করোনা দুর্যোগের এই সময়ে কারখানা বন্ধের ঘোষণা বেসরকারি মালিকদেরকে শুধু উৎসাহিত করবে তাই নয়, তাদেরকে বেপরোয়া করে তুলবে। শ্রমিক ছাঁটাই করে সরকারের প্রণোদনা নেয়ার প্রবণতা বাড়বে, যার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ সৃষ্টি হবে। তাই রাষ্ট্রীয় পাটকল সমুহ বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পূর্ণোদ্দমে পাটকলগুলো চালু করা ও পাট শিল্পকে আধুনিক করার দাবী জানান।

সমাবেশে অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের প্রায় ৩ লাখ সদস্য এবং পাটচাষী পরিবারের ৩ কোটি সদস্য পাট ও পাট শিল্পের সাথে যুক্ত। তাদের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের আত্মঘাতি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহŸান জানান। অন্যথায় পাটকল শ্রমিক ও পাটচাষীদের ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধে সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন। এবং সেই সাথে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ধনী তোষণের নীতিতে প্রনীত বাজেট প্রত্যখান করে, সংসদে পাশের পূর্বে করোনা দূর্যোগ থেকে দেশের অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা রক্ষায়, অপচয়, দূর্নীতি বন্ধ করে শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ও শ্রমিক ছাঁটাই, লে-অফ বন্ধ করতে শ্রমজীবী মানুষদের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ করার আহ্বান জানান।

আমাদের বাণী ডট কম/২৭  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।