ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা, নিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা ও শিক্ষক সংকট দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ এর অপেক্ষামান ৩৭ হাজার পরীক্ষার্থীদের শূন্যপদ পূরনের ভিত্তিতে প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তন করে নিয়োগ দানে ডিও লেটারের মাধ্যমে সুপারিশ করেছেন ১৭ জন সংসদ সদস্য। জাতির ভবিষ্যৎদের শিক্ষা জীবনের শুরুতে যাতে কোন সংকটে পড়তে না হয় সে জন্য এই খাতকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এই খাতের সবচেয়ে বড় সঙ্কট শিক্ষক সঙ্কটকে সমাধান করতে প্যানেলের জন্য সুপারিশ করেছেন এসব সাংসদেরা।

নড়াইল-১ এর সাংসদ কবিরুল হক (মুক্তি) প্রাথমিকে চলমান চরম শিক্ষক সংকট দূর করতে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ডিও লেটারের মাধ্যমে সুপারিশ করেন। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও-২ এর মাননীয় সাংসদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো: দবিরুল ইসলাম এম. পি, নীলফামারী-৩ এর সাংসদ রানা মোহাম্মদ সোহেল, ঝিনাইদহ-৩ এর সাংসদ এ্যাড. শফিকুল আজম খান এম. পি, বরগুনা-২ এর সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল-৮ এর ( বাসাইল-সখীপুর) সাংসদ এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম এম. পি, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহিলা সংরক্ষিত আসন-২৩ এর সাংসদ রাবেয়া আলীম, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪১ এর সাংসদ মোসা: তাহমিনা বেগম, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও নওগাঁ-৩ এর মাননীয় সাংসদ মো: ছলিম উদ্দিন তরফদার, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঝিনাইদহ-৪ এর সাংসদ মো আনোয়ারুল আজীম (আনার), আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-১(সুন্দরগঞ্জ) এর সাংসদ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নাটোর-১(লালপুর-বাগাতিপাড়া) এর সাংসদ  মো শহিদুল ইসলাম বকুল, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বরগুনা-১ এর মাননীয় সাংসদ এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, দিনাজপুর-১ এর সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামালপুর-৩ এর সাংসদ আলহাজ্ব মির্জা আজম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ফরিদপুর-৪ এর সাংসদ জনাব মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ এর মাননীয় সাংসদ ডা: সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ এ চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত না হওয়া ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তন করে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার জন্য ডিও লেটারের মাধ্যমে সুপারিশ করেন।

রাজস্বখাত ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে চূড়ান্ত ভাবে পদায়ন করা হয় ১৮১৪৭ জন শিক্ষককে। তারপরও বিদ্যালয় গুলোতে পর্যাপ্ত শূন্যপদ থাকার কারণে শিক্ষক সংকট দূর হচ্ছে না।

নড়াইল-১ আসনে ৪১ জন শিক্ষককে পদায়ন করার পরও ৩০ অধিক শূন্যপদ রয়ে গেছে। ঠাকুরগাঁও-২ এর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ৮৭ জন শিক্ষককে পদায়ন করার পর ফাঁকা থেকে যায় বেশ কিছু পদ। এছাড়া বরগুনা-২ আসনে এ ২১৪ জন, নীলফামারী-৩ আসনে ৯০ জন, ঝিনাইদহ-৩ আসনের (মহেশপুর-কোটচাঁদাপুর) উপজেলায় ৭৭ জন, টাঙ্গাইল-৮ আসনে (বাসাইল-সখীপুর) ৮৯ জন, নওগাঁ-৩ আসনে ( বদলগাছী-মহাদেবপুর) ২০ জন, ঝিনাইদহ-৪ আসনে (কালীগঞ্জ) ৪৩ জন, গাইবান্ধা-১ আসনে ( সুন্দরগঞ্জ) ১৭ জন, নাটোর-১ আসনে (লালপুর-বাগাতিপাড়া) ২৮ জন, বরগুনা-১ আসনে ( আমতলী-তালতলী) ১৮৬ জন, দিনাজপুর-১ আসনে( কাহারোল- বীরগঞ্জ) ১৯৭ জন, জামালপুর-৩ আসনে ৭৩ জন, ফরিদপুর-৪ আসনে (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) ৭৬ জন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের প্রায় ৬২ জন শিক্ষককে পদায়ন করার পরও অধিক সংখ্যক শূন্যপদ খালি রয়ে গেছে।

প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৮ সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী আবেদন করেন যার মধ্যে থেকে ৫৫,২৯৫ জন(২.৩%) পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় । অধিক পরিমাণে শূন্যপদ থাকার সত্ত্বেও ৫৫,২৯৫ জন থেকে মাত্র ১৮১৪৭ জন পরীক্ষার্থীকে চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। বাকি ৩৭ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হন। প্রাথমিকে রীট জটিলতার কারণে ২০১৪ থেকে ২০১৮ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ৪ বছর পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ায় অনেক পরীক্ষার্থীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যায় এবং যারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ পায় বেশির ভাগেরই এটি ছিল শেষ চাকরির পরীক্ষা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও চাকরি না পাওয়ার কারনে তারা পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে চলছে পুরো পরিবার। ফলে চরম আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। চরম হতাশা ও অন্ধকার তাদের জীবনকে গ্রাস করে ফেলছে। অথচ এই ৩৭ হাজার নিয়োগ বঞ্চিতদের মধ্যে লুকিয়ে আছে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিশন-২১ এর আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার হার শতকরা ১০০ ভাগ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। এ অঙ্গীকারের প্রধান অন্তরায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চরম শিক্ষক সংকট ও ছাত্র-ছাত্রীর ঝড়ে পড়া।
তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্যানেল প্রবর্তনের মাধ্যমে যদি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত না হওয়া ৩৭ হাজার মেধাবী পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে একদিনকে যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুজিব বর্ষে প্রতি ঘরে ঘরে একজন করে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়নের এক নতুন অধ্যয়ের সূত্রপাত হবে।

আমাদের বাণী ডট কম/২৮  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।