ইন্টারনেট বা অর্ন্তজ্বাল হলো জ্ঞানের এক বিশাল দুনিয়া যেখানে শিশু কিশোর অনায়াসে নিজেকে সম্দ্ধৃ করতে পারে। জ্ঞানের বিশাল জগতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে এর চেয়ে উপযুক্ত প্রযুক্তি আর নেই। আবার অন্যদিকে নিজেকে নেতিবাচক দুনিয়ার সাথেও পরিচিত করাতে পারে। এটা নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের ওপর। সোজা কথায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সামনে দুটো রাস্তা। একটা ভালোর দিকে। যেখানে শুধুই জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার। অন্যটা হলো খারাপ। যেখানে নিজেকে ধংস করার প্রস্তুতি নেয়া যায়। কে কোনদিকে যাবে সেটা তার ইচ্ছা। কিন্তু যেসব ছেলেমেয়েরা স্কুল পরে তারা শিশু। যেখানে তাদের ভাল মন্দ বোঝার বয়স হলেও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সময় হয় না। তারা বন্ধুদের সাহায্যে হোক, কৌতুহলী বশত হোক বা অন্য কোন ভাবে হোক পর্ণ সাইট বা খারাপ সাইট গুলিতে প্রবেশ করছে। প্রবেশ করার কারণও খুব সোজা।

নিষিদ্ধ জগতের দিকে প্রবল আগ্রহ আমাদের সহজাত। এসব জগতে একবার প্রবেশ করলে তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। এটাও এক ধরনের নেশার মত। যা একজন শিশুর মনোজগতে মারাত্বক প্রভাব ফেলে। ধংস করে দেয় সৎ চিন্তাগুলিকে। বারবার টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারের দিকে। ভালো করার আগ্রহ তার মধ্যে থেকে কমতে থাকে। এবং তার আত্মবিশ্বাস অতিমাত্রায় নেমে যায়। ইন্টারনেটের যে বিশাল ভালো একটি দিক রয়েছে তা তার কাছে অজানা থেকে যায়। স্কুুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে, বাড়িতে পড়ার ফাঁকে যেকোন সময় সুযোগ পেলেই খারাপ সাইটগুলোতেই ঢুকছে। অনেকে দেশেই পর্ণ সাইটগুলির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু কিশোরদের মুক্ত রাখতে পর্ণ সাইটগুলি নিষিদ্ধ করেছে সেদেশের সরকার। আমাদের দেশেও অনেক পর্ণ সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে দেখা যায় এমন ২৪৪ টি পর্ণো সাইট ব্লক করা হয়েছে। এর আগেও এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আসলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন ওয়েবসাইটগুলোর সবই বন্ধ করে দেয়া উচিত। পর্ণো সাইটগুলো ক্রমেই ঘূণপোকার মত আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিঃশেষ করে ফেলছিল। সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযান অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী এবং ইতিবাচক।

গত বছর একটি তথ্যে ঢাকার স্কুলগামী ৭৭ ভাগ শিশু পর্ণগ্রাফী দেখে বলে তথ্য প্রকাশ করেছিল মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারী সংস্থা । তবে এটা কেবল ঢাকার চিত্র না। অন্যান্য শহরগুলোতেও একই অবস্থা। কারণ স্মার্টফোন এখন শিশুর নাগালেই থাকে। আর নবম বা দশম শ্রেণিতে পড়া একটা শিশু অনায়াসেই স্মার্টফোন হাতে পায়। সেই সাথে ইন্টারনেট সুবিধা। এটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং আমাদের সংস্কৃতির জন্য, শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকীস্বরূপ। বলা যায় দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে বাড়তে আজ এই হারে এসে পৌছেছে। এবং এখনই না থামাতে পারলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। শুধু এই সংস্থার তথ্যেই নয় বরং বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের উপর প্রচারিত প্রতিবেদনেও পর্ণগ্রাফীর বিষয়টি উঠে এসেছে। এই জরীপে ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর উপর পরিচালিত এ জরিপে পর্ণগ্রাফী নিয়মিত দেখার বিষয়টি নজরে এসেছে। এরা সুস্থ যৌন শিক্ষার বিপরীতে একটি অসুস্থ এবং বিকৃত যৌন রুচির পরিচয় পাচ্ছে। যা পাওয়ার জন্য এসব শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট করতে হচ্ছে না। হাতের মুঠোর মধ্যে থাকা সস্তা, দামী প্রায় সব মোবাইলেই রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা। আর এই সুযোগের অপব্যাবহার করে নিজের মনের মারাত্বক ক্ষতি সাধন করছে। আামাদের হাতের নাগালে প্রাপ্য এসব ডিভাইসে ইচ্ছা করলেই ইন্টারনেটে ঢুকে যেকোন সময় এসব অশ্লীল ভিডিও চিত্র দেখতে পারে ,সেগুলো নেট থেকে নামাতে পারে এবং পরবর্তীতে দেখার জন্য সংরক্ষণ করতে পারে।

স্কুলে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মনোজগত হয় আবেগ প্রবণ। এদের মনের অংশটাই জটিল। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করাও কষ্টসাধ্য। এইসব শিক্ষার্থীর মনে থাকে অগাধ কৌতুহল। আর কোনভাবে একবার এ পর্নো দেখা শুরু হলে তা মনের বড় ক্ষতি করবে এতে আর সন্দেহ কি। লেখাপড়ার ব্যাগে, অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে বিদ্যালয়েই মোবাইল ফোন নিয়ে আসে অনেক শিক্ষার্থী। তারপর তার অপব্যাবহার করে। এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। আমাদের দেশের অনেক অভিভাবক আছেন যারা সন্তানদের খোঁজ খবর নেন না। শুধু সেমিষ্টার শেষে ফলাফলের খোঁজ নিলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

আমার সন্তান কোথায় যায়, কার সাথে মেলামেশা কাে,লেখাপড়ায় সত্যিকারের মনোযোগ কতটুকু ইত্যাদি বিষয় নিয়মিত এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কারণ সন্তান আপনার তাই দায়িত্বে পুরোটাই আপনার। সন্তান যদি ভাল কিছু কাে তার পেছনে যেমন আপনার নাম বলা হয় ঠিক তেমন ভাবেই খারাপ কিছু করলেও আপনাকেই কথা শুনতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডী পার হলেই সন্তানকে মোবাইল কিনে দেয়। সেক্ষেত্রে অভিভাবক সন্তানের প্রতি তার আবেগের বিষয়টি সামনে তুলে আনেন। কিন্তু সেই মোবাইল তার সন্তানের জন্য আদৌ কোন দরকারী বস্তু কি না তা একবারো যাচাই করেন না

। হয়তো সন্তানের প্রতি অতি মমত্ববোধ থেকেই এটা করেন। কিন্তু তাদের খেয়াল রাখতে হবে তার কিনে দেওয়া মোবাইলটা সে কিভাবে ব্যাবহার করছে। আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। এটা সন্তানদের কাছ থেকে অভিভাবকের দুরুত্ব বাড়ার কারণেও হতে পারে। সুতরাং সন্তানকে সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। দুরত্ব তৈরি করে নয় বরং ভালোবেসে কাছে টেনে এ কাজটি করতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান সরকার যদি এই কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে পারে তাহলে দেশকে এই অন্ধকার দিক থেকে মুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে একটি আলোর পথ দেখানো সম্ভব হবে।

সাংবাদিক ও কলাম লেখক

আমাদের বাণী/আ-আ-হ-মৃধা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।