চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যু বা আহত হলে অনুদানের জন্য ঘুরতে হবে না ডিসি অফিসে। এখন থেকে এই টাকা ইএফটি পদ্ধতিতে যাবে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। বিভিন্ন ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এখন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের আবেদন গৃহীত হলে চেক ইস্যু করার বদলে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে অনুদানের অর্থ দেয়া হবে। অর্থাৎ চেকের বদলে ভুক্তভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা।

এ ধরনের একটি প্রস্তাব সম্মতির জন্য অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের হয়রানি অনেক কমে যাবে। স্বজনহারা বা বিপদগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের অনুদানের টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে বা হয়রানির শিকার হতে হবে না। দিতে হবে না ঘুষ বা কমিশন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী মৃত্যুবরণ বা গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ীভাবে কাজে অক্ষম হলে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী অনুদান দেয়া হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখা তা যাচাই-বাছাই করে থাকে।

অনুদান প্রদানসংক্রান্ত কমিটি কর্তৃক আবেদন গৃহীত হলে আবেদনকারীর নামে চেক ইস্যু করা হয়। জেলা পর্যায়ের চেক আবেদনকারীর নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই চেক বিভিন্ন দফতর ঘুরে নানা প্রক্রিয়া শেষে আবেদনকারীর হাতে তুলে দেয়া হয়। সেই চেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার পরই মেলে কাঙ্খিত টাকা।

এ পদ্ধতির মাধ্যমে গত ৫ অর্থবছরে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ভুক্তভোগী পরিবারদের দেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল, কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। অর্থবছরের শেষ দিকে সময় স্বল্পতার কারণে চেক গ্রহণ ও বিতরণ জটিলতায় চেক বাতিল হয়ে যায়। গত অর্থবছরও এ ধরনের ৪৫টি চেক বিভিন্ন জেলা থেকে ফেরত এসেছে।

ফলে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনুদান প্রদান প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে।

অর্থ সচিবের কাছে লেখা ওই প্রস্তাবে আরো বলা হয়, রূপকল্প ২০২১ বির্নিমাণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে মানুষের দোরগোড়ায় দ্রুত সেবা পৌঁছে দেয়া।

প্রসঙ্গত, বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনুদান পান ৮ লাখ টাকা। আর গুরুতর আহত হয়ে কেউ স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে তার পরিবারের সদস্যরা পান ৪ লাখ টাকা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।