ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে গেছেন। তিনি অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশের গড়িমসির সুযোগে তিনি পালিয়েছেন বলে অভিযোগ মামলার বাদী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হকের। এদিকে ফেনী ও রংপুর দুই জায়গার পুলিশই তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য একটিসবলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রংপুরে এসেছে। কিন্তু মোয়াজ্জেম হোসেন অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত। পরোয়ানাটি সোনাগাজী থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে। রংপুরে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক কাজ করার জন্য তিনি ফেনীর পুলিশকে জানাবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েছেন। এর আগে তার মুঠোফোনটি সচল থাকলেও গতকাল তা বন্ধ পাওয়া গেছে। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক নিজেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন, নেননি। এখন যেহেতু পরোয়ানা ফেনী ও রংপুর দুই জায়গাতেই পৌঁছেছে বলে পুলিশ স্বীকার করেছে, দেখা যাক তারা এখন কী করে। তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমকে কোথাও দেখলে ধরে পুলিশে দিন।’

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর দিন দশেক আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন।

ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুই দিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ১১ জুন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে হাজির হলে বিচারিক আদালত জামিনের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হবেন, এমন প্রত্যাশা আসামির থাকে। এ মুহূর্তে তাকে গ্রেপ্তারের দায়িত্ব রংপুর রেঞ্জের পুলিশের। মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে বিচারিক আদালতে হাজির করাও তাদের দায়িত্ব। কারণ মোয়াজ্জেমের সর্বশেষ কর্মস্থল রংপুরে। এখন যেহেতু মোয়াজ্জেম হোসেন অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত, কাজেই তিনি পলাতক। আর তাকে যেকোনো জায়গার পুলিশই গ্রেপ্তার করতে পারে। এমনকি জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আদালতে হাজির হলে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তারেও কোনো বাধা নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।