সুজন ভট্টাচার্জ, ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম; প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোন করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত বান্দরবানের লামা পৌর শহরকে লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি এ ঘোষণা দেন। লকডাউন ঘোষণা করে দোকান-পাট বন্ধ রাখাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবল চাকমার নেতৃত্বে শহরে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়।
- জানা যায়, বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা আক্রান্ত মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিধি মতে রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।
বিধি মতে, লকডাউন এলাকায় সবধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অনুমতি সাপেক্ষে জরুরি সেবার গাড়িগুলো চলতে পারবে। তবে পণ্যবাহী গাড়ির মালামাল লোড-আনলোড রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে। দিনের বেলায় কোনো ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি ঢুকতে পারবে না। এ ছাড়া লকডাউন চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। এ ছাড়া রেড জোনে শুধু ফার্মেসি, হাসপাতাল, নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
- লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, চেয়ারম্যান, এনজিও কর্মীসহ ৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। বাকিরা চিকিৎসাধীন। গত ২৩ ও ২৪ জুনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত ২৩ জুন একদিনেই পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশ সদস্যসহ ১০ ব্যক্তির করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তদের নির্দেশনানুযায়ী লামা পৌর শহর রেড় জোনের আওতায় পড়ে।
লকডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পৌর এলাকায় করোনা পজিটিভ রোগী সংখ্যা বাড়ছে। তাই সংক্রমণ এড়াতে এ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ২১ দিন পর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকবে। যারা এই আদেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (২৫ জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ৬১৬২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৪৬ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৩ । গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৯টি। শনাক্তের হার ২১.৯২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮২৯ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫১ হাজার ৪৯৫ জন। সুস্থতার হার ৪০.৬৭% এবং মৃত্যুর হার ১.২৮ শতাংশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানানো হয়, পুরুষ ৩২ জন ও নারী ৭ জন। বয়স বিশ্লেষণে জানা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১-৪০ একজন, ৪১-৫০ সাতজন, ৫১-৬০ ৯ জন, ৬১-৭০ ১২ জন এবং ৭১-৮০ সাতজন এবং ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন এবং বাড়িতে ১১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৬৪৫ জনকে। আইসোলেশন থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে ৩৭৪ জনকে।
আমাদের বাণী ডট কম/২৫ জুন ২০২০/পিপিএম