এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সাথে কোনো না কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যুক্ত হওয়ার অভিযোগ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। সব ধরনের অপরাধের সাথেই তাদের একাংশের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার দৃষ্টান্ত অহরহ সংবাদমাধ্যম এবং বিভিন্নভাবে উঠে আসছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেছেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে আইনের রক্ষকই আইনের ভক্ষক। এভাবে চলতে থাকলে এমন একটা সময় দাঁড়াবে, যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম বদলে আইন লঙ্ঘনকারী সংস্থা রাখতে হবে। আমরা এই পরিস্থিতি দেখতে চাই না। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাগর-রুনি মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী সদস্য জেড আইন খান পান্নার সভাপতিত্বে জাতিসঙ্ঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সমন্বয়ক তামান্না হক রিতি এবং আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসবের প্রতিকারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। হেফাজতে নির্যাতনসহ অন্যান্য নির্যাতন হবে নাÑ এমন সুস্পষ্ট অঙ্গীকার হওয়া প্রয়োজন। যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। রাজনৈতিক পর্যায় থেকে যদি এমন অঙ্গীকার না থাকে এবং সেই অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে কারো ওপর দয়া-করুণা না করে যদি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে সেই অঙ্গীকারের কোনো অর্থ নেই।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যে অপরাধগুলোর অভিযোগ উত্থাপিত হয়, সেগুলোর বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা দেখি বিভাগীয় তদন্ত হয়, বিভাগীয় তদন্তের নামে বদলি করা হয়, সর্বোচ্চ অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, এটি তো পুরস্কৃত করা। অবসরে গেলে তিনি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আর বদলি হলে এক জায়গা থেকে অপরাধ করে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। এসব নিরসনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এতে করে মানুষের মনে আস্থার একটি জায়গা তৈরি হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এইচআরএফবির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৯ আগস্ট জাতিসঙ্ঘের কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে সরকারের কাছে ৭৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এক বছর পর সরকারকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

অগ্রাধিকার বিষয় তিনটি হলো- আটকদের অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ এবং যেসব এনজিও নির্যাতনবিরোধী কমিটিকে সহযোগিতা করেছে তাদের সুরক্ষা দেয়া।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।