ডেস্ক রিপোর্ট; সুপার সাইক্লোন আম্পানের প্রভাবে আজ বুধবার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে গোটা দক্ষিনাঞ্চলে। মেঘনায় দুই ট্রলারের সংঘর্ষে রাসেল হাওলাদার নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রচারণা চালাতে গিয়ে নৌকা ডুবে শাহআলম মীর নামে এক স্বেচ্ছাসেবক নিখোঁজ রয়েছেন। উপকূলীয় এলাকা বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলায় নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। দক্ষিণের ৬ জেলার প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

উপকূলীয় এলাকা বরগুনার তিনটি নদী বিষখালী, বুড়িশ্বর ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মাহতাব হোসেন। তিনি জানান, স্বাভাবিক সময় জোয়ারের উচ্চতা থাকে ২.৮৫ সেন্টিমিটার। বুধবার দুপুরে বরগুনায় জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল ৩.১৮ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপরে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আম্পান মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলার আমতলী ও তালতলীর ১২৮টি সাইক্লোন সেল্টারে বুধবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সরকরাহ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন আশ্রয় নেওয়া মানুষ।

তালতলীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সৌর বিদ্যুৎ না থাকায় সাইক্লোন সেল্টারগুলোতে আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, সাইক্লোন সেল্টারে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা জেনারেটরের ব্যবস্থা করবেন।

উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও কুয়াকাটায় সকাল থেকে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগর উত্তাল। সাগ‌রে পা‌নি বেড়ে বন‌্যা‌নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ছুয়েছে। কলাপাড়ায় সতর্কীকরণ প্রচারনা চালাতে গিয়ে নদীতে নৌকা ডুবে শাহ আলম মীর (৫৫) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক নিখোঁজ হয়েছে। বুধববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের হাফেজ প্যাদার খালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ শাহআলম মীর লোন্দা গ্রামের মৃত সৈয়দ কদম আলীর পুত্র। কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।

দ্বীপ জেলা ভোলার বিভিন্ন নদীতে পানি বেড়েছে। সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে বলে জানান সেখানকার কলেজ ছাত্র এম ইফতিয়াজ। ভোলার লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদিপ্তর মিশ্র জানান, ঝড় শুরুর আগেই মেঘনার পাড় প্লাবিত হয়েছে। প্রমত্তা মেঘনার এমন রূপ দেখে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। লালমোহন উপজেলার মেঘনা তীরের অধিকাংশ জেলে তীরে চলে এসেছেন।

  • বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, আম্পানের প্রভাবে ফুসে উঠেছে কীর্তণখোলা নদী। এরই মধ্যে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় নগরীর নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। নগরীর পলাশপুর, রসুলপুর, জিয়ানগরের নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরের দিকে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সে. মি. উপর দিয়ে বইছে।

হিজলায় মঙ্গলবার গভীর রাতে মেঘনায় দুই ট্রলারের সংঘর্ষে নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর ট্রলার মাঝি রাসেল হাওলাদারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে বরিশালেরও বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, দমকা বাতাসে অনেক স্থানে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ায় সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রায়ণ কেন্দ্রে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার জন। অভিযোগ উঠেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান বিলম্ব আঘাত হানতে পারে এমন গুঞ্জনে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অনেকেই বুধবার সকালে নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন। এ প্রসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপপরিচালক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্রুত তারা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরবে।

  • বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িতে চলে যাওয়া মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের খবর ভোর থেকেই উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রচার করছে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা। সব জেলাতেই অবস্থান বুঝে বাড়ানো হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র হিসেবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খোলা রাখার আহবান জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সার্বক্ষণিক চাবিসহ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্টোল রুমও।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে বরগুনার চার স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেত এবং মাছের ঘেরসহ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বতর বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবণগোলা গ্রামের একটি নির্মাণাধীন স্লুইসগেটের পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়। ৫ নম্বর আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের পায়রা নদী-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত আট গ্রাম। পাথরঘাটা উপজেলায় জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে আরো সাত গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সদর উপজেলার ছোট লবণগোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি একটি স্লুইসগেট নির্মাণের কাজ চলমান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উঁচু জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে এখানের পাঁচ গ্রাম তলিয়ে গেছে।

আমাদের বাণী ডট/২০ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।