ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর গ্রামে সুনশান নীরবতা ভেঙ্গে মধ্যরাতে অচেনা নারী পুরুষের ভীড়। উৎসুক গ্রামবাসি তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন আবার সেই আলোচিত পানির কল থেকে পানি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কে বা কারা মাঠের স্যালো মেশিন থেকে টিউবওয়েলের মাথা খুলে এনে সেখানে লাগিয়ে দিয়েছে। ব্যাস ! এতেই গুজবে কান দেওয়া মানুষগুলো দুর দুরান্ত থেকে মেঘলা আকাশ ও ঘুটঘুটে অন্ধকার মাড়িয়ে ছুটে আসছে পানি নিতে। তাদের বিশ্বাস এই কলের পানি খেলে নাকি ক্যান্সার, প্যারালাইজড, অন্ধত্ব, বোবা, গ্যাস্ট্রিকসহ সব রোগ সারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, দেশের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ টিউবওয়েলটি অপসারণের নির্দেশ দেন।

ঝিনাইদহ সদরের ইউএনও শাম্মি ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন ঘটনাটি স্রেফ গুজব। এই পানি পান করে কারো রোগ ভাল হয়েছে এমন কাউকে পাননি। এও দেখা গেছে প্রথম দিন পানি নিয়ে দ্বিতীয় দিন আর কেও আসেনি। যারা আসছে তারা গুজবে কান দিয়ে আসছে।

ইউএনও সরেজমিন দেখে আসার পর মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর পুলিশ ফাড়ির এসআই মোঃ দেলোয়ার হোসেন পানির কলটি খুলে নিয়ে যান। হুজুগে বাঙ্গালী কলের পানি না পেয়ে কলের গোড়ায় পানি ঢেলে সেই কাদা মাটি মেখে বাড়ি ফিরছিল। অবশেষে শুক্রবার মধ্যরাতে প্রশাসনের নজরদারী ও বিধিনিষেধ অমান্য করে আবারো সেখানে কলের মাথা বসিয়ে পানি নিতে শুরু করেছে মানুষ। তবে রাতের বেলা মেয়েদের চেয়ে পুরুষ মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। এই রাতে দেখা গেছে সুদুর পটুয়াখালী থেকে আজব এই কলের পানি নিতে এসেছে একজন। আমরা জানি ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনে নুর আহাদ নামে এক ব্যাটালিয়ন সদস্য মুরগীর গোস্তের সাথে পানি পড়া দিয়ে দেশ ব্যাপী আলোচনায় আসে। চলচিত্র জগতের খলনায়ক মরহুম রাজিবও আসেন সে সময় কবিরাজ নুর আহাদের পানি পড়া নিতে। রাজিব ছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত। নুর আহাদের পানি পড়ায় রাজিবের রোগ সারেনি। শেষ পর্যন্ত তিনি হার মানেন মৃত্যুর কাছে। নুর আহাদকে বিতাড়িত করতে ঝিনাইদহ শহর হয়েছিল রনক্ষেত্র। তাই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই আলোচিত এই টিউবওয়েলের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। আর এই কলের পেছনে যারা গুজব ছড়িয়ে কলকাঠি নাড়ছে, ফায়দা লুটছে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।