জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা;  উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদীর বাঁধ ধ্বসে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধের ৭০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিজিবি ক্যাম্প। এটি ঘটেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায়। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক সাংবাদিকদের জানান জানমাল রক্ষার্থে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি এই বাঁধ নির্মাণের। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোন সময়েই সাধারণ মানুষের দাবি আমলে নিতে চাইছিলো না। ফলে ২০১৭ সালে স্বেচ্ছাশ্রমে দীর্ঘ দুই কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে আর্থিক সহায়তা করেন নীলফামারী-১ (ডিমলা ও ডোমার) আসনের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন সরকার।

ডিমলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তবিবুল ইসলাম ও স্থানীয় সমাজসেবী রফিকুল ইসলাম। তাদের দেয়া তিন লাখ টাকা দিয়ে বাঁধটি কোনভাবে নির্মাণ করা হয়। বাঁধটিকে টেকসই করতে গত বছর ডিমলা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এলজিএসপির আওতায় চার লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু কাজ শুরু করা হলেও আর্থিক অপ্রতুলতার কারণে বাঁধের স্থাীয়করণ কাজ মাঝখানে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। এ বছর আষাঢ় মাসের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাঁধটির প্রায় ৭০০ মিটার ধ্বসে গিয়ে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এ বাঁধটি ধ্বসে পড়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ী, চর খড়িবাড়ী, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গুড্ডিমারী ও বাউরা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ চরম আতংকে রয়েছে। পূর্ণ বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল নেমে আসলে বাঁধটি পুরোপুরি নদীগর্ভে চলে যাবে। এতে করে হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানিতে ডুববে। বাস্তুহারা হয়ে পড়বেন পাঁচ ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই সঙ্গে সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বিজিবি ক্যাম্পটি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো নিশ্চিন্ন হতে পারে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভূল্লিপাড়া এলাকার খড়খড়িয়া নদীর গ্রাম রক্ষা বাঁধের বাম তীর ভাঙ্গছে। এতে করে মসজিদসহ শতাধিক বাড়ি নদীর পেটে যাবে বলে ওই এলাকার অধিবাসী আজিজুল হক জানিয়েছেন।

ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী এলাকার জৈষ্ঠ নাগরিক আলাউদ্দিন, আমজাদ হোসেন ও মোশাররফ ভুইয়া বলেন বাঁধটি মেরামতের জন্য বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিমলা ডিভিশনে ধর্না দিয়েও কোন ফল মিলেনি। এ বিষয়ে মতামত জানতে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়শ্রী রাণীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানি আসায় প্রবল ¯্রােতে রাঙ্গাপানি নদীর ব্রীজের সংযোগ রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দেবীগঞ্জের টেপড়ীগঞ্জ ও নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দেবীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যয় হাসান ও উপজেলা প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম। এদিকে কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্র ও শনিবারের ভারি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে তিস্তা ব্যারেজে পয়েন্টে আবার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপদসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোন সময় বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি যেতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেল জানিয়েছে। এতে করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছয় ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধা জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতো নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা বন্যাকবলিত হতে পারে বলে ধারণা করছে এলাকার বিশিষ্টজনরা।

আমাদের বাণী ডট কম/০৫ জুলাই  ২০২০/পিপিএম 

সৈয়দপুরের বিজ্ঞাপন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।