ঠাকুরগাঁও জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের মধ্যে খোদ পুলিশের শেল্টারে একাধিক স্পটে এখনও প্রকাশ্যে চলছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয়রা বলছেন, কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজ করে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক মাদক স্পট।

এখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের মূল শেল্টারদাতা সদর থানার ৫ জন। তাদের ম্যানেজ করতে পারলেই মাদক ব্যবসায়ীদের আর কোনো সমস্যা নেই। বিকাশের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নেন তারা। ওইসব পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এমন মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে পুলিশকে কোনো সোর্স তথ্য দিলে তার রেহাই নেই। পরে সেই সোর্সকে মাদকসহ মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা।  অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের স্পটে প্রকাশ্যেই চলছে মাদক ব্যবসা। রোড এলাকার মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করে আশরাফুল ও সুজন, তাছাড়া এ স্পটে এখনও প্রকাশ্যেই কয়েক নারী মাদক বিক্রি করছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্ধ্যা নামলেই ইয়াবায় আসক্ত তরুণদের আনাগোনা বেড়ে যায় এ স্পটে। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পরও এখানে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক।

সম্প্রতি এই প্রতিবেদক এক ইয়াবা ক্রেতার সঙ্গে স্পট গিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি প্রত্যক্ষ করে। সোর্সের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে ওই ক্রেতা দুটি ইয়াবা ট্যাবলেট কিনেন। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হওয়ার তথ্য পাওয়ার পর সরেজমিন গিয়ে সত্যতা যাচাইয়েও একই চিত্র মেলে।

মাদক ক্রয়ে সহায়তাকারী সোর্স জানান, কিছুদিন আগে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চলার কারণে অপরিচিত কারও কাছে মাদক বিক্রি করা হয় না। আগে একটি ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল ২০০ টাকা। কড়াকড়ির কারণে এখন দাম ৩০০ টাকা।

স্থানীয়রা জানান, ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশের সাথে সখ্য থাকায় এ নিয়ে তারা কোনো কথা বলতে চান না। কথা বললেই ধরে নিয়ে সাজানো মাদক মামলা দেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইয়াবা দিয়ে মামলা দেওয়া হয়।

রোডে মাদক ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এমন একাধিক ব্যক্তিকে এএসআই সাজেদুর, আনসোপ, এসআই সাইফুল মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন বলেও অভিযাগ রয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগী এমন অভিযোগ করেছেন।

শহরের একাধিক সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যখন পুলিশের, কিন্তু পুলিশ মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত। আরো অভিযোগ রয়েছে ঠাকুরগাঁও থানায় প্রতিদিন ১০/১২ জন সাধারণ মানুষকে সন্দেহজনকভাবে ধরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ৩৪ ধারায় আদালতে চালান করে দেয়। কেউ টাকা না দিলে তাকে মামলা দিয়ে চালান করে দেয়। এই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করায় অতিষ্ঠ শহরবাসী।

এদিকে সাংবাদিকরা মাদকের বিরুদ্ধে লেখলে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন এএসআই আনসোপ, সাদেজুর, আক্তার ও মাসুদ। সংবাদ প্রকাশ করলে ‘খবর আছে’ বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।

অভিযোগের ব্যাপারে সদর থানার এএসআই সাজেদুর ও আনসোপ বলেন, আমরা কোনো মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আপস করেছি এমন কোনো রেকর্ড নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দরকার হলে তদন্ত করবে। তাদের সঙ্গে আপনি কথা বলে দেখতে পারেন। বাকি অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি আসিকুর রহমান বলেন, আগে সদরে এলাকার বিভিন্ন স্পটে প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি চলত। এগুলো আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন শহরে কোনো মাদকের স্পট নেই।

তিনি আরো বলেন, ভ্রাম্যমাণ কেউ কেউ মাদক বিক্রি করে থাকে। তাদের ধরতে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কতিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।