বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মুখে তাদের শিবিরগুলোকে ঘিরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোসহ নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

শিবিরগুলোর ভিতরে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দল থেকে দুই বছরে ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কী পরিকল্পনা সরকারের?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ: শাহ কামাল বলেছেন, শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন গ্রুপের কোন্দল নিরসনে তাদের সচেতন করার জন্য শিবিরগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।

তিনি বলছেন, “ইতিমধ্যে আমরা যে কাজটি করেছি, তাদের ক্যাম্পে তাদের মধ্যে অনেক অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে তাদের মধ্যে যাতে এটা নিরসন করা যায়, সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। প্রতিটি ক্যাম্পে আমরা ১০০করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি।তারা শিবিরগুলোর রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে বসে কোন্দল বা দ্বন্দ্ব নিরসনে চেষ্টা চালাচ্ছে।”

সরকারি কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, ১১লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে সজাগ থাকার বিষয় যেমন রয়েছে। একইসাথে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার বিষয় আছে, এই দু’টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।

কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা রয়েছে। তবে এই প্রস্তাবে দাতাদের আপত্তি রয়েছে।

রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পরছে অপরাধে

শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়া, মানব পাচারের চেষ্টা এবং শিবির থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা এই বিষয়গুলো উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।

কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে পালিয়ে অন্য এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে, এমন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুলিশ সম্প্রতি আটক করেছে।

বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিতে গিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীও গ্রেফতার হয়েছে।

এছাড়া মে মাসেই সমুদ্রপথে নৌকায় করে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টার সময় ৮৪জন রোহিঙ্গাকে পুলিশ এবং কোস্টগার্ড আটক করে।

হতাশা থেকে উগ্র মানসিকতা

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার শিউলী শর্মা।

তিনি বলছিলেন, হতাশা থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে উগ্র মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। তার মতে, “এখান আশ্রয় নিয়ে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা সেভাবে সুবিধা পাচ্ছে না।অল্প জায়গায় একটা গিঞ্জি পরিবেশে অনেক মানুষ থাকছে,ফলে তারা ফেরোসাস টাইপের হয়ে যাচ্ছে। তাদের মাঝে উগ্র মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।”

তিনি আরও বলছেন, “মিয়ানমার থেকে পালিয়ে তারা বাংলাদেশে এসেছে। এর দুই বছর হতে চললেও তাদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।এসব তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।”

কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শিবিরগুলোতে অবৈধ অস্ত্রধারী এবং উগ্র কিছু সংগঠন তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে, এমন অভিযোগ তারা বিভিন্ন সময় পেয়ে থাকেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শিবিরগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলছে স্থানীয় প্রশাসন।

শিবির থেকে পালানো নিয়ে পুলিশের উদ্বেগ

তবে শিবিরগুলো থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টাকে বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছে পুলিশ।

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলছিলেন, শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে তারা অনেকদিন ধরে কথা বলছেন।

তার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলছিলেন, “তারা এখানে আসার পরে আমাদের স্থানীয়দের ভাষা এবং পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছুই আয়ত্ত করে ফেলেছে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেকপোস্টগুলো মূলত রাস্তার ওপরে।এর বাইরে তারা গ্রাম, জঙ্গল বা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে শিবির থেকে চলে আসার চেষ্টা করে। এটা একটা উদ্বেগের বিষয়।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের মন্ত্রণালয়েও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সাহায্যকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তাতে আপত্তি রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেছেন, এখন শিবিরগুলোর অবস্থান পাহাড় এবং জঙ্গলে যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে, তাতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেই আলোচনাও সরকারে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।