সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের চরগোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে ফজলুর রহমান এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫৬ পেয়েছে। সে উপজেলার মিটুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। জন্মগতভাবে তার দুই হাত ও একটি পা নেই। এক পা দিয়ে চলে আর এক পা দিয়ে লেখে। এই এক পা দিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করেছে সে।

তাকে স্কুলে নিয়ে যেতো তার ছোট বোন আসমা। সেও এবার এসএসসিতে জিপিএ ৩.০৬ পেয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের এ দুই ভাই বোনের সাফল্যে গোটা গ্রামবাসী আনন্দে মেতে উঠেছে। ফজলুর প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে দরিদ্রতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা আজ হার মেনেছে। সে পিএসসিতে ২.১৭ ও জেএসসিতে ৩.৭৫ নাম্বার পায়।

ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে এক পা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে স্কুলে গিয়েছি। আমার বই খাতা কলম আমার বোন আসমা নিয়ে গেছে। যে দিন আমার ছোট বোন স্কুলে যায়নি সেদিন আর কেউ আমার বই নেয়নি। ফলে সেদিন আর আমার স্কুলে যাওয়া হয়নি। আবার বৃষ্টি এলে সে দিনও স্কুলে যেতে পারিনি। সবার দোয়া ও সহযোগিতায় আমি এ রেজাল্ট করতে পেরে খুশি। তবে অর্থাভাবে এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারবো কি না তা এখনও জানি না।

ফজলুর রহমানের বাবা সাহেব আলী বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র দিনমজুর। ক্ষেত খামারে কমলা দিয়ে যা পাই তা দিয়ে অভাব অনটনের সংসারই ভালোভাবে চলে না। তার উপর প্রতিবন্ধী ছেলে ও মেয়ের ভরণ-পোষণ কষ্ট সাধ্য। লেখাপড়ার খরচ জোগাব কিভাবে।

ফজলুর মা সারা খাতুন বলেন, ২০০০ সালে ফজলু বিকলাঙ্গ অবস্থায় জন্ম নেয়। আমরা স্বামী-স্ত্রী কেউ লেখাপড়া জানি না। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে লেখাপড়ায় সাহায্য করে। ফজলুর দুই হাত ও একটি পা জন্মগতভাবেই নেই। কিছু কিছু কাজ নিজেই করতে পারে। কিছু কাজে তাকে সাহায্য করতে হয়।

মিটুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ২০১৪ সালে ফজলুর এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সে লেখাপড়ায় ভালো, স্মরণ শক্তি তার প্রখর। তারা দুই ভাইবোনই আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী। তাদের এই রেজাল্টে আমরা সবাই খুশি।

এ ব্যাপারে সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ফজলুর রহমানের লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা দেখে ফেসবুকের মাধ্যমে ৭৬ হাজার টাকা অনুদান তুলে দেই। এ টাকা দিয়েই তার এতোদিন লেখাপড়া চলেছে। তার আরো লেখোপড়ার ইচ্ছা রয়েছে। সাহায্য সহযোগিতা পেলে সে আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।