ডেস্ক রিপোর্ট ঢাকা;   নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. জাহাঙ্গীর আলম। কিছুদিন আগেই তার করোনাভাইরাস পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরেও তথ্য গোপন রেখে নিয়মিত প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি!

  • আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, করোনা পজিটিভ হওয়ার পরও কয়েকটি অপারেশনও করেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) থেকে ওই ক্লিনিকে নতুন করে রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এর আগে, গত ৬ জুন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তথ্য গোপন করে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া ২৩ জুন প্রথম ফলোআপ রিপোর্টেও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এ সময় বাড়িতে কিংবা হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকার কথা থাকলেও তা না করে প্রাইভেট একটি হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখেছেন সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসক।

  • এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরেও তাকে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ২০২ নম্বর কক্ষে রোগী দেখা অবস্থায় পাওয়া যায়।

তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাস আক্রান্ত বলে শনাক্ত হন নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জাহাঙ্গীর আলম।

  • এদিকে গত ২৩ জুন প্রথম ফলোআপ রিপোর্টেও কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। নিয়ম অনুযায়ী বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার কথা ছিল জাহাঙ্গীর আলমের। কিন্তু তাকে পাওয়া গেছে শহরের প্রাইম জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখা অবস্থায়।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম কয়েকটি গণমাধ্যমে জানান, গত ৬ জুন করোনা শনাক্ত হয় তার। এ কয়দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থা সুস্থ হওয়াতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে রোগী দেখতে নয় তার স্ত্রীকে নিতে এসেছিলেন। তার স্ত্রীও প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক বলে জানান তিনি।

  • এদিকে ফলোআপ রিপোর্টেও তার করোনা পজিটিভ আসার বিষয়টি স্বীকার করে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ফলোআপ রিপোর্ট পজিটিভ আসার বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে জেনেছি। পজিটিভ এসেছে আবার নেগেটিভও আসবে। আরও একটা ফলোআপ পরীক্ষা তো আছে। আর আমি তো শারীরিকভাবে সুস্থই। আমি আজই কেবল আমার স্ত্রীকে নিতে এসেছিলাম। আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।

এদিকে প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. আহসানুল কবির বলেন, বিকেল পৌনে ৪টার দিকে হাসপাতালে তিনি একটি ইনজেকশন নিতে এসেছিলেন। এ সময় একজন রোগী আসলে দূর থেকেই তার কাগজপত্র দেখেছেন।

  • তবে ফলোআপ পরীক্ষায় তার পজিটিভ এসেছে এ বিষয়টি জানতেন না নাকি এই এমডি। এছাড়া আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে রোগী দেখার বিষয়টি অস্বীকার করেন হাসপাতালের এমডি ডা. আহসানুল কবির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় বলেন, এটা কখনই কাম্য নয়। আমি বিষয়টি জানতাম না। আমি জানি তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

  • করোনা পজিটিভ হয়েও চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়টি ‘গর্হিত, অনৈতিক এবং দণ্ডনীয় অপরাধ’ উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, এটা হয়ে থাকলে সত্যিকার অর্থে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে রোগীরাও মামলা করতে পারেন। আর ঘটনা জানার পরপরই আমরা উক্ত বেসরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। পাশাপাশি ডা. জাহাঙ্গীর যাদের (রোগী) দেখেছেন বা সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আর উক্ত বেসরকারি হাসপাতালটি লকডাউন করা হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আইনগতভাবে তিনি এটা করতে পারেন না। তাকে আইসোলেশনে থাকতেই হবে। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলেই আমি ব্যবস্থা নেব।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (২৬ জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ১৬৬১  জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৬৮ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ ।ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এসব তথ্য জানা গেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট পরীক্ষা হয়েছে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১টি নমুনা। গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ্য হয়েছেন ১৬৩৮ জন, এনিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ্য হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৩৩ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/২৭  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।