নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  করোনাভাইরাসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। প্রায় ৩০ জনের মুমূর্ষু অবস্থা।

  • গতকাল সোমবার (১৫ জুন ২০২০)  একদিনে ২৫ জন করোনা শনাক্ত হলেও এদিন একজনও সুস্থ হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটের করোনা আপডেট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করে ডিপিই’র ওয়েবসাইটে প্রতিদিন তথ্য আপডেট করা হচ্ছে।

  • এ পর্যন্ত প্রাথমিকের ১৬৬ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ৯ জন কর্মচারী ও ৯ জন শিক্ষার্থী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক মারা গেছেন। পর্যাক্রমে এ পর্যন্ত ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন শিক্ষক, ৪ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী একজন ও ৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। গতকাল ২৫ জন শনাক্ত হলেও এ সময়ের মধ্যে কেউ সুস্থ হয়নি।

দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭২ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রামে ৬৫ জন, খুলনায় ৭ জন, বরিশালে ১৪ জন, সিলেটে ২০ জন, রংপুরে ৯ জন এবং ময়মনসিংহে ৯ জন রয়েছেন। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. জোবায়দুর রহমান কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

  • জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনের অবস্থা মুমূর্ষু। নিজ উদ্যোগেই নানাভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। নিম্ন বেতনের প্রাথমিক শিক্ষকরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এই শিক্ষকদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারও চিকিৎসকের পরামর্শ লাগলে সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

  • যেসব শিক্ষক কোভিড-১৯ আক্রান্ত তাদের বেশিরভাগই নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন। তবে সম্প্রতি প্রাথমিকের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে ডিপিই। প্রতিদিন এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে ২৪ ঘণ্টা পরপর ওয়েবসাইটে আপডেট করা হচ্ছে।

 প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তার তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য সার্বিক সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • তিনি বলেন, বর্তমান মহামারি যতদিন স্বাভাবিক না হবে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি দেশের যেখানেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আক্রান্ত হবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। আক্রান্তদের সুস্থতায় তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (১৫ জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ১২০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৯ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে।করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৭৩৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৫০৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২০৯ জনের।

আমাদের বাণী ডট কম/১৬ জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।