জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা;  করোনা প্রতিরোধে জেলার  সৈয়দপুরে আদর্শ পাইকারী সবজি বাজার চালু করা হয়েছে। তবে এমন প্রত্যাশার আকাঙ্খা দীর্ঘ প্রায় ছয় দশক ধরে হৃদয়ে লালন করে আসছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অনেক দেরিতে হলেও লালিত স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা যাচ্ছে। এ বাজারটি গড়ে উঠেছে পৌর এলাকার ১৫নং ওয়ার্ডের বাইপাস সড়কে। বাড়তি কোলাহলমুক্ত ও খোলামেলা জায়গায় বাজারটি গড়ে ওঠায় সৈয়দপুরসহ আশপাশের ১০টি উপজেলার মানুষের মাঝে বইছে আনন্দের লহরী। প্রায় ১৫০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই বাজারটি। নেই সেখানে দোকান মালিক-ভাড়াটিয়ার ঝক্কি ঝামেলা। এর ফলে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি ভাবনাহীন থেকে মুক্ত মনে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে শহরের ঘিঞ্জি আবাসিক এলাকার নয়া বাজারে পাইকারী সবজি বাজারটি ছিল। এ বাজারে আসা যাওয়ার জন্য ছিল না কোন মানসম্মত সড়ক ব্যবস্থা। সড়কের ওপরেই ট্রাক থেকে মালামাল লোড আনলোড করতে হতো। এর ফলে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বৃদ্ধি পেত। প্রায় সময় লেগে থাকতো উটকো ঝামেলা। এসব কারণে আন্তঃজেলার ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে সৈয়দপুর শহরে আসতে চাইতেন না। এমন অবস্থা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পরিত্রাণ পেতে সম্ভাবনার দ্বার খুঁজতে থাকেন। গড়ে তোলেন পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী সমিতি। নিয়মিত দেয়া চাঁদার টাকায় গড়ে তোলা হয় ফান্ড। বিন্দু থেকে সিন্দুতে পরিণত হয় তাদের আর্থিক তহবিল। কোলাহলমুক্ত বাইপাস সড়কের পাশে কেনা হয় জমি। সমিতির প্রতিটি সদস্যই এক একটি দোকানের মালিক হন। গত ২০১৫ সালে বাজারটির সেড নির্মাণ কাজ শেষ হয়। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রাকৃতিক কাজ ও গোসল করার জন্য নির্মাণ করা হয় আধুনিক দুটি শৌচাগার। বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসে এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম জাওয়াদুল হক সরকার ও পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার। কিন্তু ২০১৬ সালে বাজারের উদ্বোধন হলেও কার্যক্রম চালু হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণেই উদ্বোধনের ৫ বছরে বাজারটি চালু হয়নি। ইতোমধ্যে করোনাকাল শুরু হয় দেশে। হটস্পট জোনে পরিণত হয় সৈয়দপুর। প্রতিদিন বাড়তে থাকে করোনা রোগী। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয় নিত্য নতুন নাম। এমন অবস্থা থেকে সৈয়দপুরবাসীকে বাঁচাতে ও করোনা প্রতিরোধে শহরের মধ্য স্থান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পাইকারী সবজি বাজারটি স্থানান্তর করতে উদ্যোগী ভূমিকা নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ। তার আহ্বানে গত ৪ জুন ইউএনও’র দপ্তরে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে বাজারটি আবাসিক এলাকা থেকে অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেই কথা সেই কাজ। পাইকারী বাজারের সব কিছুই প্রস্তুত ছিল। অবশিষ্ট ছিল সিদ্ধান্তের। সেদিনের সিদ্ধান্তমতে সবজি ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব মার্কেটে পাইকারী সবজি বাজারের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হয় ৫ জুন শুক্রবার থেকে।

ওই দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা বেগম লাকী, সংরক্ষিত আসনের এমপি রাবেয়া আলীমের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা প্রকৌশলী একেএম রাশেদুজ্জামান রাশেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদল, সাধারণ সম্পাদক শহিদ সন্তান মহসিনুল হক মহসিন, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ জিয়াউল হক জিয়া, পাইকারী সবজি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান লিটন, সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আজম প্রমুখ। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ।

নতুন পাইকারী সবজি বাজার বিষয়ে জানতে কথা হয় খুচরা সবজি বিক্রেতা অলিউর, জয়নাল, হামিদ, ফজলু, শাহিদসহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা জানান, আমরা খুব আয়েশে এখানে কেনাকাটা করতে পারছি। পাইকারী সবজি বিক্রেতা রফিক, হারুন, তবিবর ও একইভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

পাইকারী সবজি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান লিটন বলেন, সবার সহযোগিতায় দীর্ঘদিন পর হলেও ব্যবসায়ীদের একটি নিজস্ব ঠিকানা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আর ভাড়া দোকানে ব্যবসা করবে না। লিটন আরো জানান আন্তঃজেলাসহ সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, খানসামা, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ডোমার, ডিমলাসহ আশপাশের চাষি ও ব্যবসায়ীরা সৈয়দপুর পাইকারী সবজি বাজারে তাদের পণ্যের বেচাকেনা করে। পুরাতন পাইকারী বাজারটি ঘিঞ্জি এলাকায় থাকায় ক্রেতা বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতো না। সবজির কোন ট্রাক পুরাতন পাইকারী সবজি বাজারে যেতে পারতো না। বর্তমানে এই বাজারে দোকানের সামনেই মালামাল লোড আনলোড সম্ভব। বাড়তি কোন ঝামেলাও নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ বলেন, এ বাজারটি চালুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যার যেমন সুরাহা হলো, তেমনি মানুষ খোলামেলাভাবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে বেচাকেনা করতে পারবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আখতার হোসেন বাদল বলেন, শহরের সম্প্রসারণের জন্য এ পাইকারী বাজারটি যথোপযুক্ত স্থানে করা হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, বাজারটি চালু করার মধ্য দিয়ে শহরের বিস্তৃতি ঘটলো। সুন্দর পরিবেশে গড়ে ওঠলো একটি পাইকারী সবজি বাজার।

আমাদের বাণী ডট কম/০৭ জুন ২০২০/সিসিপি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।