ঢাকাঃ মানিকগঞ্জের পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঢেউ উঠেছে । নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন।
পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে চান প্রধানত তিন জন । এদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল, মানিকগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রমজান আলী ও নৌকাকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়া বর্তমান মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম। এর বাইরেও বর্তমান বেশ কজন প্রার্থী হতে চাইলেও প্রধান আলোচনায় এই তিন নেতাই।
বিভিন্ন সময়ে মানিকগঞ্জ পৌরবাসীকে আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছে বিভিন্ন পৌর মেয়র কিন্তু কথায় ও কাজে মিল না পাওয়ায় নির্বাচিত মেয়র পরবর্তীতে আর ভোট পাননি। ফলে নতুন স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যক্তিকেই চান পৌরবাসী।
৯টি ওয়ার্ড ও ৭৫টি মহল্লা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ পৌরসভা। দুই যুগ ধরে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নাগরিক সেবা ও জীবন-মানের তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি এখানে। পৌরবাসীকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের আশ্বাস দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেলেন মো. রমজান আলী। তিনি পৌরবাসীকে দেয়া প্রতুশ্রুতি পূরণ করতে না পারায় ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনে পৌরবাসী মেয়র হিসেবে তাঁদের ভোটের মাধ্যমে নৌকাকে পরাজিত করে নির্বাচিত করে বর্তমান মেয়র আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গাজী কামরুল হুদা সেলিমকে। বলে রাখা ভালো যে, গাজী কামরুল হুদা সেলিম মানিকগঞ্জ পৌর সামাজিক কল্যাণ সমিতির ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে ২০১৬ সালে এই ব্যানারেই তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু পরবর্তীতে গাজী সেলিমের অসাংগঠনিক এবং একঘুয়েমির ফলে এই সংগঠনটিকে সে আর ধরে রাখতে পারেনি। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারনে পৌরবাসীদের মধ্যে তাঁর প্রতি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হ্যালোবাইক নিয়োগ বাণিজ্য টেন্ডারবাজিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম ও পারিবারিক করন, নিরবিচ্ছিন্ন পানি বিদ্যুৎ গ্যাস সরবরাহ, রাস্তা ঘাটের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ।
অতীতে বাম রাজনীতি করা সেলিম মানিকগঞ্জের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন পৌর নির্বাচনে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তাকে পদ হারাতে হয়।
এদিকে পৌর নির্বাচনে আগে তিনি ২৭টি সেবা উল্লেখ করে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হবার পর তাঁর অধিকাংশই এখনও পূরণ করতে পারেনি।
মানিকগঞ্জ পৌরবাসী বরাবরই বিভিন্ন মেয়র প্রার্থীর আশ্বাসে তাঁদের জীবনমান পরিবর্তনের লক্ষে ভোট দিয়ে ঠকেছেন। প্রতিবারই নতুন কাউকে তারা মেয়র নির্বাচিত করেছেন পৌর এলাকা উন্নয়ন হবে এই আশায়। অতীতের ২ জন মেয়রের সীমাহীন দুর্নীতির কারনে পৌরবাসী অতিষ্ঠ। ফলে তারা নতুন মুখ খুঁজছেন।
দুই যুগ ধরে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পৌর পিতারা তাঁদের যে নাগরিক সুবিধা দেবার আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়েছিলেন তা পূরণ না হওয়া মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে তাঁদের আর বিশ্বাস নেই।
এদিকে পৌর নির্বাচনে নতুন মূখ হিসেবে আলোচনায় এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আলহাজ্ব সুলতানুল আজম আপেল ইতিমধ্যে ২২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। মানিকগঞ্জ জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহ প্রায় অর্ধশত সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। শীতে অসহায় গরিব দুঃখীদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ, করোনায় পৌরবাসীদের মাঝে খাদ্যসহ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানেটাইজার বিতরণসহ এমন কি করোনা রোগীদের বহনের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। বন্যা কবলিত এলাকাতে তাঁর ব্যাপক তৎপরতা দেখা গিয়েছে। নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি না হয়েও পৌরবাসীর জন্য তার যে অবদান সেই অবদানই আগামী পৌর নির্বাচনে তাকে পৌর পিতার আসন পাইয়ে দেবে বলে মত পৌর এলাকার বায়োজ্যেষ্ঠদের।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপে জানা যায়, প্রচার প্রচারণায় আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল ব্যাপক ভাবে এগিয়ে রয়েছে। পৌরবাসীদের ধারণা আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল ব্যাতিত অন্য কাউকে নৌকা প্রতিক দেয়া হলে নিশ্চিত পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।