জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা-সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে ৭ লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।  সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের আগে রোববার সন্ধ্যা থেকেই কাশ্মীরে টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ। কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছে তারা। কয়েকটি জায়গায় দফায় দফায় বিক্ষোভ ঘটেছে। এতে পুলিশ-সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া এবং পুলিশের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সরকারের নির্দেশ অনুসারে, চেন্তৌর, হারি নিবাস, ফরেস্ট গেস্ট হাউসের মতো হোটেল ও গেস্ট হাউস এবং সরকারি ও বেসরকারি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গ্রেফতার করে হরি নিবাসের পৃথক দুটি কটেজে রাখা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন শুধু ড. ফারুক আব্দুল্লাহ ও ৯১ বছরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি। মঙ্গলবার মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ফারুক আব্দুল্লাহ। ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর বাবার অভিযোগ, সরকার তাকে গৃহবন্দি করেছে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তা অস্বীকার করেছেন।

শ্রীনগর থেকে নির্বাচিত এমপি ফারুক আব্দুল্লাহ বাড়ির পেছনের গেইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, লোকসভায় ৩৭০ ধারার বিলোপ নিয়ে আয়োজিত ভোটাভুটিতে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি।

জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তা শাফকাত খান এ সময় ফারুক আব্দুল্লাহের বাসার বাইরে অবস্থান করছিলেন। তিনি দাবি করেন, প্রবীন এই নেতাকে তার গুপকার বাড়িতে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকেও বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ একেবারেই অসাংবিধানিক। ৩৭০ ধারার জন্য বুকে গুলি নিতে রাজি আছি। আমি জানি না কোথায় আছে আমার ছেলে। সরকার আমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় দাবি করেছেন ফারুক আব্দুল্লাহকে গৃহবন্দি করা হয়নি। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে তার চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে বাধা প্রাপ্ত হন তিনি।

এএফপি জানায়, ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। জম্মু-কাশ্মীর জুড়ে রাজনৈতিক নেতাসহ ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ৬ জন বিক্ষোভকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীনগরের এক পুলিশ অফিসারের দাবি করে, ‘তাড়া খেয়ে একজন বিক্ষোভকারী ঝিলম নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং মারা যায়।’

এদিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ডেপুটি এডিটর মুজামিল জালিল শ্রীনগর থেকে দিল্লিতে ফিরে দাবি করেন, দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার খবর জেনেছেন তিনি। তবে এ ঘটনা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, সোমবার রাজ্যসভায় কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হয়। পরদিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দিল্লিতে পাঠানো রিপোর্টে জানায়, জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলকে স্বাগত জানিয়েছেন কাশ্মীরবাসী।

তবে বিজেপি সরকারের এমন ঘোষণায় কারফিউ ভেঙে ঠিকই বের হয়ে এসেছে কাশ্মীরের মানুষ। সংঘর্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। এ দিকে প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়সাল কাশ্মীরের সামগ্রিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।