হুমায়ুন কবির, কুষ্টিয়া জেলা সংবাদদাতা;  কুষ্টিয়ার ১৮ হাজার খামারিরা কোরবানীর পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। মহামারী কোন ভাইরাসের কারণে অধিকাংশ খামারি রায়পুরায় সর্বস্বান্ত হতে বসেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয় খামারিরা। জেলার ছয়টি উপজেলার খামারিরা ও স্থানীয় কৃষকরা এ বছর ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোরবানির পশু পালন করেছে। এলাকার খামারিরা বলছেন কোরবানির কারণে অর্ধেক পশু এবার বিক্রি হবে না বলতো বিপুল অঙ্কের টাকার লোকসান গুনতে হবে অধিকাংশ খামারিদের।

দেশের মানুষের চাহিদার অধিকাংশই পূরণ করে থাকে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন হামারও কৃষকদের উৎপাদিত পশু পালন থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় খামারিরা ও কৃষকরা কোরবানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ পশু পালন করেছে।

বিধির বাম কেভিড -১৯ এ পরিস্থিতিতে অধিকাংশ খামারিরা তাদের পালন করা পশু বাজারজাত করতে না পারায় বিপুল অঙ্কের টাকা লোকসান হবে। খামারি ও স্থানীয় কৃষকরা ব্যাংক এবং এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে পশুখাদ্যের ব্যয় করে সর্বশান্ত হতে বসেছে।  একাধিক খামারিরা বলছেন, এই খামারি ও কৃষকদেরকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয় সরকারের বড় অঙ্কের ভর্তুকি ও প্রণোদনার মাধ্যমে রক্ষা করার বিকল্প নাই।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, কুষ্টিয়ার বিখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বেশ কদর রয়েছে দেশের প্রতিটি জেলায়। সেখানে কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সময় মতো এ ছাগল গুলো কুষ্টিয়া থেকে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো এবং বাজারজাত করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে খামারিরা বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে।
এ বছর কোরবানির ঈদ টার্গেট করে জেলার ১৮ হাজার খামারি পালন করেছেন ১ লাখেরও বেশি গরু। এছাড়া প্রায় ৬০ হাজার ছাগল পালন করেছেন খামারিরা। করোনার কারণে এবার প্রায় ৫০ ভাগ পশু অবিক্রীত থাকতে পারে বলে জেলার খামারি ও কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়বা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি আব্দুল মালেক। সারা বছর বাড়িতে কমবেশি গরু পালন করেন। তবে কোরবানির ঈদ সামনে আসলে লাভের আশায় বাড়িতে গরুর সংখ্যা বাড়ান। এবারও তার খামারে ছোটবড় মিলিয়ে ১২টি গরু রয়েছে। দিন-রাত গরু পরিচর্যায় সময় পার করছেন। তবে ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তার দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

খামারি আব্দুল মালেক আরো জানান, গত বছর গরু বিক্রি করে মোটামুটি লাভ হয়েছিল। এবারও গরু পালছি। করোনার কারণে এবার লাভ তো দূরে থাক আসল তুলতে পারলেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। গোখাদ্যের যে দাম বেড়েছে তাতে এবার লোকসান হবে বলে মনে হচ্ছে। অন্য বছর আগেই ব্যাপারীরা বাড়ি আসতো। এবার কেউ আসছে না। দু-একজন আসলেও দাম বলছেন অনেক কম।

করোনা পরিস্থিতির কারণে লাভ কম হলেও অনেক খামারি স্থানীয় বাজারে আগেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। যারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য জেলায় গরু বিক্রি করেন তারা অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি বোঝার।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৯০ হাজার গরু পালন হয়েছিল। খামারিরা ভালোই লাভ পেয়েছিলেন। এবার জেলায় প্রায় এক লাখের কাছাকাছি গরু পালন করছেন খামারিরা। গতবারের তুলনায় এবার গরুর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার বেশি।

আমাদের বাণী ডট কম/১১  জুলাই  ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।