শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, চার শর্ত পূরণ করলে একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারে। শর্তগুলো হল- প্রতিষ্ঠানের বয়স বা স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। স্বীকৃতির একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ভূমিতে পরিচালনা করতে হয়।

কিন্তু নিজস্ব ভবনসহ এমপিওভুক্তির কোনো যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর ‘শ্যামলী পাবলিক স্কুল’কে মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি শিক্ষক নেতাদের।

সোমবার শ্যামলীর আদাবরের শেখেরটেক ৭ নম্বর রোডে ‘শ্যামলী পাবলিক স্কুল’-এ গিয়ে দেখা যায়, আদাবর মাছ বাজারের প্রবেশপথে চারপাশে নোংরা পরিবেশ। বাজার সংলগ্ন অন্ধকারাচ্ছন্ন সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় গড়ে উঠেছে ‘শ্যামলী পাবলিক স্কুল’।

কিন্ডারগার্টেনের আলোকে তৈরি করা এ স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স করানো হচ্ছে। স্কুলের ভেতরে চারটি ক্লাস রুম রয়েছে। ছোট একটি রুমে প্রধান শিক্ষক বসেন। স্কুলে প্রায় ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তবে তাদের কেউই এনটিআরসিএ’র (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) সনদধারী নন। স্কুলের একটি ক্লাসে দুই জন ও অন্য আরেকটি ক্লাসে তিন জন শিক্ষার্থীর দেখা মেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামলী পাবলিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাতেন দীর্ঘদিন স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ২০০২ সালে আদাবর বাজারের দ্বিতীয় তলার আবাসিক একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কিন্ডারগার্টেন চালু করেন তিনি। অনুমোদন ছাড়াই সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ানো শুরু করা হয়। পাশ্র্ববর্তী একটি বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ফরম পূরণ করানো হয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী ও এসএসসি পরীক্ষার। ২০০৫ সালে এখানে এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়। কিছুদিন পর সেটির অনুমোদনও মিলে যায়।

জানা গেছে, ভোকেশনাল কোর্সের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৮ সালের মাঝামাঝি এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সের স্বীকৃতি দেয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এরপর অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে ৯ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাড়িতে এবং সিঙ্গাইর বাসস্ট্যান্ডে ‘শ্যামলী পাবলিক স্কুল’র দুটি ব্র্যাঞ্চ করেন আব্দুল বাতেন। তবে সেখানে শিক্ষার্থী না আসায় এখন সেসব বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাতেনকে।

আব্দুল বাতেন বলেন, ‘অনেক কষ্টে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে আসছি, ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার মতো আয় হয় না বলে পার্শ্ববর্তী কয়েকজন ভাবীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সকলে মিলে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল মুকিত মজুমদারের সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করা হয়।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রশাসনে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অর্থ নিয়ে ঘর নেই, ছাদ নেই, অস্তিত্ব নেই, এমন কিন্ডারগার্টেন বা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত করেছেন। অথচ যোগ্য ও মানসম্মত অনেক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটা শিক্ষার জন্য এক ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক সমাজ এর প্রতিকার চায়।’

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত অনেক ভুল-ভ্রান্তির সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেখছেন।’

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন উপমন্ত্রী। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করে, যার মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৭৬টি। এই তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। কারণ তালিকায় স্থান পায় প্রায় অস্তিত্বহীন ও যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠান, আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান, স্বীকৃতিবিহীন এবং ভাড়া-বাড়িতে পরিচালিত ও ট্রাস্ট পরিচালিত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।