বন বিভাগ ও সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠা ১০৬টি বিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিতে পারছে না টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ভূমি উন্নয়ন কর দিতে গিয়ে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে।

বিদ্যালয়ের জমির নামজারি (খারিজ) ও কর উপযোগী থাকায় ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩ হাজার ২৪৮ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করেছে স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। তবে বাকি ১০৬টি বিদ্যালয়ের জমির নামজারি না থাকায় ভূমি উন্নয়ন করের আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা ফেরত যাচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৪১টি বিদ্যালয়ের জমির নামজারি রয়েছে। বাকি ১০৬টি বিদ্যালয় বনের অথবা সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠায় এসব বিদ্যালয়ের নামে নামজারি করা যায়নি।

ইতিমধ্যে স্থানীয় শিক্ষা কার্যালয় কাকড়াজান ইউনিয়নের আটটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার হাজার ৩৪০টাকা, বহেড়াতৈল ইউনিয়নের দুটি বিদ্যালয়ের আটশত ১০ টাকা, গজারিয়া ইউনিয়নের তিনটি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ২৯০টাকা, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের তিনটি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ৪৬০টাকা, হাতীবান্ধা ইউনিয়নের নয়টি বিদ্যালয়ের তিন হাজার ১২০ টাকা, যাদবপুর ইউনিয়নের চারটি বিদ্যালয়ের দুই হাজার ৫১০টাকা, বহুরিয়া ইউনিয়নের দুটি বিদ্যালয়ের এক হাজার ৮০০টাকা ও কালিয়া ইউনিয়নের ১০টি বিদ্যালয়ের পাঁচ হাজার ৯১৮টাকা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছে।

ছাতিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম মিঞা বলেন, ১৯৮৯ সালে ছাতিয়াচালা গ্রামের মো. জালাল মিয়া ৫২ শতাংশ বনের জমি ছাতিয়াচালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিয়ে দাতা হন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের জমি নামজারি করার আমাদের নির্দেশনা দিলে বনের জমি থাকায় ওই বিদ্যালয়ের নামে নামজারি করা যায়নি। নামজারি না থাকায় আমাদের বিদ্যালয়ের ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া যাচ্ছে না।

ছাতিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. জালাল মিয়া বলেন, ১৯৮৯ সালে ওই ৫২ শতাংশ জমি আমার দখলে ছিল। সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে দলিল মূলে দান করেছি। আমি ওই সময় জমি দান না করলে ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতো না। আর জমিগুলো এখন পর্যন্তও আমার ভোগ দখলেই থাকত।

সখীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস বলেন, আমরা ১৪৭টি বিদ্যালয়ের খাজনা দিতে সব সময়ই প্রস্তুত আছি। আটটি ইউনিয়নের ৪১টি বিদ্যালয়ের নামজারি থাকায় খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে অন্যদিকে বাকি ১০৬টি বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে জটিলতা থাকায় খাজনা দেওয়া যাচ্ছে না। এ অর্থবছরে খাজনার প্রায় ৫০ হাজার টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত যাওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, উপজেলার যেসব বিদ্যালয়ের জমিগুলো বনবিভাগের অথবা সরকারি খাস জমিতে গড়ে উঠেছে ওইসব বিদ্যালয়ের জমির ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে উপজেলায় ৪১টি বিদ্যালয়ের জমিদাতারা তাঁদের ব্যক্তিমালিকানায় থাকা রেকর্ড সম্পত্তি ওই বিদ্যালয়ের নামে দান করেছেন। এরাই হলেন সঠিক জমিদাতা। অন্যদিকে যাঁরা বনের জমি কিংবা সরকারি খাসজমি দিয়ে বিদ্যালয়ের জমিদাতা হয়েছেন তাঁরা প্রকৃতপক্ষে জমিদাতা নন। সরকার বা বনের জমি দিয়ে জমিদাতা হওয়া যায় না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।