ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  কোভিড-১৯ সংকটে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে ধনী-গরিবের ব্যবধান হলে গরীব মানুষ এ সময় কোথায় যাবে- সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ রবিবার (২৮ জুন ২০২০)  সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।

  • রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “অনেকে অভিযোগ করেছেন সমাজের উচ্চ শ্রেণি তথা ভিআইপিরা হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে, তাদের প্রতি মনোযোগ বেশি।

“তাহলে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বিষয়ক সকলকে অনুরোধ করব, বাছবিচার নয়, ধনী-গরিব নয়, বিত্তবান-বিত্তহীন নয়, ভিআইপি-নন ভিআইপি নয়; সকল রোগী সমান। আপনারা রোগীকে রোগী হিসেবে দেখবেন, কোনো ব্যবধান তৈরি করবেন না।”

  • শেখ হাসিনার সরকার ‘ধনী-গরিব, বিত্তবান-বিত্তহীন, ভিআইপি-নন ভিআইপি চর্চাকে সমর্থন করে না’ বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।

আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তার থেকে করোনাভাইরাস ‘সংক্রমণের ভয় নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস এমন এক সংক্রমণ যা কাছের মানুষকেও দূরে ঠেলে দেয়। মুহূর্তেই আপন মানুষ হয়ে যায় অচেনা, সন্তান বাবা-মাকে হাসপাতালে রেখে চলে যাচ্ছে, স্বামী স্ত্রীকে পথের পাশে রেখে চলে যাচ্ছে। আবার মৃত্যুর পর কেউ কাছে আসছে না, দাফন-কাফনের দায়িত্ব নিচ্ছে পুলিশ। পুরোটা জীবন প্রিয়জনের জন্য করে শেষ বিদায় নিচ্ছেন প্রিয়জনদের স্পর্শহীনতায়।

  • “এমন এক দৃশ্য প্রতিনিয়ত আমরা গণমাধ্যমে দেখছি। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলেছেন, মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর মৃতদেহ থেকে সংক্রমণ ছাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই বলব… নিজেকে সুরক্ষিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে দাফন-কাফন কিংবা সৎকারে অংশ নিতে পারে আপনজনরা। রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।“

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

  • তিনি বলেন, “বর্তমানে ৬৬টি ল্যাবে এ টেস্ট করানো হচ্ছে। এ সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ কোম্পানিসহ ল্যাব সুবিধা আছে এমন প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীদের জনস্বার্থে পিসিআর ল্যাব স্থাপেনের উদ্যোগের আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভাইরাসের বিস্তার রোধে পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে কাদের বলেন, “আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন রোগী চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে আইসোলেট করা।”

  • পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “অভিযোগ আছে এখনও রোগীরা হাসপাতালে ছুটোছুটি করতে করতে পথিমধ্যে প্রাণ হারাচ্ছেন। আমি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয় বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

“বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণায় রিপোর্ট এসেছে, অনেক আক্রান্ত রোগী বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে। যারা বাসা বাড়িতে থাকছেন, তাদের চিকিৎসা সেবা এবং প্রযোজনীয় ওষুধপত্র পেতে টেলিমেডিসিন সেবা তথা হটলাইন সেবা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।”

  • এই মহামারীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “করোনাভাইরাসের সঙ্কটের এ সময় দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আমি এই কঠিন সময়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (২৮ জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, গত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। ফলে ভাইরাসটিতে মোট ১৭৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০৯ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩৭  হাজার ৭৮৭ । গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪টি আর পরীক্ষা করা হয়েছে পূর্বের মিলে ১৮ হাজার ৯৯টি। শনাক্তের হার ২১.০৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪০৯ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ৭২৭ জন। সুস্থতার হার ৪০.৪৪% এবং মৃত্যুর হার ১.২৬ শতাংশ। বয়স বিশ্লেষণে জানা যায়, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১-৪০ একজন, ৪১-৫০ সাতজন, ৫১-৬০ ১৩ জন, ৬১-৭০ ১২ জন, ৭১-৮০ সাতজন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে একজন। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ জন ঢাকা বিভাগের। এরপরই আছে চট্টগ্রাম বিভাগ (১০ জন)।

আমাদের বাণী ডট কম/২৮  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।