ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘স্বীকৃত দাঙ্গাবাজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক।
মোদির হাতে মুসলিমসহ গণমানুষের রক্ত লেগে আছে—এমন মন্তব্য করে নুরুল বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর
অনুষ্ঠানে মোদি এলে ছাত্রসমাজের রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর মতো একটি মহৎ অনুষ্ঠানে মোদিকে অংশ নিতে দেব না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আজ বুধবার বিকেলে এক প্রতিবাদ সমাবেশে ভিপি নুরুল এসব কথা বলেন। ‘ভারতের সাম্প্রদায়িক মোদি সরকার
কর্তৃক ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে আন্দোলনরতদের ওপর সহিংস হামলা ও হয়রানির’

প্রতিবাদে ভিপি নুরুলের সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সমাবেশের আয়োজন করে।




সমাবেশে নুরুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নেতা নন, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নেতা। তিনি বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নেতা। আমরা যে যে দলই করি না কেন,

এ দেশের মানুষের মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান অস্বীকার করতে পারি না। সেই জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদেরও হক রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন,

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে মুসলিমদের ও গণমানুষের রক্ত লেগে আছে। মোদি একজন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজ। সন্ত্রাসী সংগঠন রাষ্ট্রীয়

স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মদদপুষ্ট মোদির দল ক্ষমতাসীন বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে যদি মোদি বাংলাদেশে আসেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে অপমান করা হবে, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হবে।

মোদি এলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কলঙ্কিত হবে মন্তব্য করে ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘২০০২ সালে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শুধু রাজনৈতিক ফায়দা লাভের

জন্য গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়েছিলেন এই মোদি। আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, মোদি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিতে চাই,

সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে, সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তখন মোদিকে ভিসা দেয়নি। অনেকগুলো রাষ্ট্রই তখন মোদির ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।’
তিনি আরও বলেন,

‘স্বীকৃত দাঙ্গাবাজ ও সাবেক আরএসএস সদস্য মোদিকে এনে বঙ্গবন্ধুর অনুষ্ঠানকে আমরা কলঙ্কিত করতে দেব না।’

সরকারের উদ্দেশে নুরুল বলেন, ‘ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মতো একজন অসাম্প্রদায়িক নেতাকে দাওয়াত করা হয়েছে, আমরা স্যালুট জানাই।
এ রকম অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার যাঁরা আছেন, তাঁদের দাওয়াত দেন। আমরা তাঁদের অভ্যর্থনা ও সংবর্ধনা দেব।’




বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে নুরুল বলেন, ‘ভারতের সব ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার

মানুষ যখন বিতর্কিত সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, সেখানে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বিজেপি হামলা চালাচ্ছে। সারা ভারতবর্ষে সিএএর

বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ যখন গড়ে উঠছে, সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য মোদিদের সন্ত্রাসী বাহিনী আরএসএস বাংলাদেশের হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনীর মতোই মুখ বেঁধে লাঠিসোঁটা

নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। আইএস যদি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হয়, আরএসএস আরেকটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এমন হামলা আমরা বাংলাদেশে

দেখেছি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে। এই দুই আন্দোলনে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী যেভাবে হামলা চালিয়েছিল,

ঠিক একইভাবে দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে।’ ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে গত বছর ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হয়েছিলেন

অভিযোগ করে নুরুল বলেন, ডাকসু ভবনে হামলার ঘটনার তদন্ত এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, এর সঙ্গে স্পষ্টভাবেই ভারতের প্রভাব রয়েছে।

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি চক্র বাংলাদেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে। তাই আপনারা যখন কথা বলবেন,

যৌক্তিক ভাষায় সমালোচনা করবেন, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কোনো কথা কোথাও বলবেন না। একজন হিন্দু বা একজন মুসলমান যদি কাউকে কটূক্তি করে,

সে কখনোই ওই সম্প্রদায়কে প্রতিনিধিত্ব করে না। সুতরাং আপনারা ঢালাওভাবে কাউকে অপবাদ দেবেন না। এটি আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ।

হিন্দু কিংবা মুসলিম নয়, মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রতিবাদ জানাব। আহ্বান, ভারতের প্রভাব যেন বাংলাদেশে না পড়ে।’




ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ

সম্পাদক আখতার হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ ছাড়া বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের

ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।