চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা; রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৩৪টি নমুনার হদিস মিলছে না। বিষয়টি জানাজানি হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিবগঞ্জ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমদ শিমুল। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রামেকের পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ ডা. সাবেরা গুলনাহার গণমাধ্যমকে নমুনাগুলো ‘ইনভ্যালিড’ হওয়ার দাবি করেছেন। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জনকে তিনি বলেছেন, ল্যাবে জমে থাকা অনেক নমুনার ভিড়ে হয়তো কোথাও নমুনাগুলো চাপা পড়ে আছে। নমুনাগুলো আজ শুক্রবার খুঁজে আগামিকাল শনিবার সিভিল সার্জনকে জানাতে চেয়েছেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে সন্দেহভাজনদের করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার ৫২টি এবং সদর উপজেলার ৮২টি নমুনার রিপোর্ট কাঙ্খিত সময়ের পরও না আসায় আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ও পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ ডা. সাবেরা গুলনাহার জানিয়েছেন অনেক নুমনার কারণে কোন সমস্যা হয়েছে। তবে নমুনাগুলো কোথায় আছে, তা শুক্রবার খুঁজে দেখে আমাদের শনিবার জানাবে বলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১২ জুলাই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সন্দেহভাজন ১৩৪ জনের নুমনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সন্দেহভাজন ৫২ ব্যক্তির এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৮২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল। ৯ দিনেও এসব নমুনার ফলাফল না আসায় গত ২০ জুলাই শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নমুনাগুলো হারিয়ে গেছে। এ ঘটনা জানার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমদ শিমুল সরাসরি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি নমুনা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। শিবগঞ্জের ৫২টি নমুনার রিপোর্ট না আসার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন খোঁজ নিয়ে দেখেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাঠানো ৮২টি নমুনারও খোঁজ মিলছে না।

জানা গেছে, করোনা সন্দেহভাজন বিবেচনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গত ৮ ও ১১ জুলাই পুলিশ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ১৩৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে। এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য গত ১২ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাবে হস্তান্তর করা হয়। ২০ জুলাই শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান নমুনার বিষয়ে জানতে চাইলে ল্যাবের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানান, নমুনাগুলো বাতিল হয়েছে।

এদিকে, দুই উপজেলার ১৩৪টি নমুনা হারিয়ে যাওয়ায় পুনরায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে রামেক ল্যাবে পাঠাতে বলা হয় মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের পক্ষ থেকে। ফলে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাব থেকে পুনরায় ওইসব ব্যক্তির নমুনা বিনামূল্যে সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠাতে বলা হয়েছে। কিন্তু যাদের নমুনা হারিয়েছে, তাদের সেভাবে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নমুনা দেয়ার পর ফলাফলের জন্য ৯ দিন অপেক্ষার পর তারা ফলাফল না পেয়ে যে যার মতো করে নিজ নিজ পেশায় ও কাজে চলে গেছে। এখন তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।

নমুনা হারানোর বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ও পিসিআর ল্যাবের ইনচার্জ প্রফেসর ডা. সাবেরা গুলনাহার বলেন, যে কোনো কারণেই হোক শিবগঞ্জের ৫২টি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ৮২টি নমুনার ফলাফল পাওয়া যায়নি। আমরা ওইসব নমুনা ইনভ্যালিড (বাতিল) বলে ধরে নিয়েছি। পরীক্ষা ছাড়াই নমুনা কীভাবে বাতিল ঘোষণা করা হবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আবারও নমুনা দিলে বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. নওশাদ আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন তাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি সিভিল সার্জনকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি অনুসন্ধান করে তখন জানানো যাবে নমুনাগুলোর কি হয়েছে। তার আগে এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২৩ জুলাই ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, দেশে একদিনে করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আরও ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ৮০১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৬ জন এবং সুস্থ হয়ে উঠেছে ২ হাজার ৬ জন।গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পূর্বেরসহ ১২ হাজার ৩৯৮টি। মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৬০টি। ২৪ ঘণ্টায় এই সংগৃহীত নমুনা থেকে শনাক্ত রোগী পেয়েছি ২ হাজার ৮৫৬ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত ২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ।’

আমাদের বাণী ডট কম/২৪ জুলাই ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।