আনোয়ার হোসেন আরিফ, কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতাঃ  দিন যাচ্ছে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজনের।
বছরের পর বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়েই বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে দিন পার করলেও বাঁধ সংস্কার ও উচ্ছেদ অভিযানে আশ্রয়হীন হাজার হাজার পরিবার এখন দিশেহারা। নেই সম্বল নেই রোজগার স্বপ্নহারা মানুষগুলোর দিন এখন কাটছে কষ্টে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে তাদের বসবাস। বর্তমানে সেখানে তাদের মৃত্যু হলে কবর দেয়ার জন্য নিজস্ব এক খণ্ড জায়গা পর্যন্ত নেই। তবে এক সময় তারা সুখেই ছিল। জমি, হালের বলদ, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু সবই ছিল তাদের। এক একটি পরিবার ছিল সচ্ছল গৃহস্থ আজ তাদের ঠাঁই হয়েছে বাঁধের পার্শ্বে ছোট ঝুপড়ি ঘরে।
এখানে গড়ে উঠেছে ভাঙ্গা গড়া মানুষের জীবন সংসার। অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় পেতেছে স্বপ্নহারা মানুষগুলো। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার আশ্রয়হীন এসব মানুষ এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বছরে পর বছর ধরে ভাঙ্গা গড়ার জীবন নিয়ে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষের ইতিহাস প্রবর্তিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র তিস্তার কড়াল গ্রাসে চাপা পড়েছে তাদের সাফল্য অর্জনের কাহিনীও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের মানুষের দু’পাশে গড়ে উঠেছে নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষের জনপদ।
নিয়তির পরিভূত এসব সংগ্রামী মানুষ ধনুকের মতো বেঁকে গেছে। বার বার ভাঙনের শিকার অভাবী মানুষগুলো ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে। রাজার ভিটার জয়নাল, জুয়েল, ব্যাংকমারা বাঁধে আশ্রয় নেয়া ইলয়াস জানান, ব্রহ্মপুত্র তাদের বাড়ি কয়েকবার বিলীন হয়ে গেছে। এখন দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে জীবনযাপন করছি।
রমনা মিস্ত্রি পাড়া বাঁধের আশিঊর্ধ্ব বয়সের কাচুয়ানী, জহিরনের রুদ্ধ কণ্ঠে শোনা গেল তার মতো অনেকেরই বাড়িঘর ৫-৭ বার ভেঙেছে ব্রহ্মপুত্র। এসব পরিবারের অনেকেই বাঁধে বাসা বেঁধেছে। সরকার উচ্ছেদ অভিযান ও বাঁধ সংস্কারের অংশ হিসাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকেরা এদের উচ্ছেদ করায় তারা এখন দিশাহারা। যদিও অনেকে এখন বাঁধের নিচে আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু সেটিও ছাড়তে হবে রয়েছে নির্দেশ।
শেষ আশ্রয়টুকু ছাড়তে হলে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা মানুষজন এখন কই যাবে এই ভাবনা এখন তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। অতি অভাবী অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটানো এসব মানুষগুলো ধার-দেনা এবং বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছে। কার্তিকে মঙ্গার সময় এসব মানুষের হাতে কাজ থাকে না। সে সময়ও এনজিওগুলো কাবলিওয়ালার ভূমিকা পালন করে থাকে। সে সময় তারা চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ কিংবা আগাম শ্রম বিক্রি করে এনজিওদের ঋণের টাকা পরিশোধ করে।
বাঁধের উপর আশ্রয় নেয়া মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষা প্রদানের জন্য এদের কেউ খোঁজ-খবর নেন না। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের প্রতি তেমন কোনো নজর দিচ্ছেন না। তারা জানায় জন্মনিবন্ধন সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই (শিক্ষিতবাদে)। তাদের অভিযোগ ভোটের সময় ছাড়া
জন প্রতিনিধিরা তাদের তেমন খোঁজ-খবর রাখে না। এদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের ভাগ্যে জুটেছে ভিক্ষাবৃত্তি। অন্যসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এসব মানুষ এক মুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
আমাদের বাণী ডট কম/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।