দিনাজপুর সংবাদদাতা; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে শতভাগ বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জনবল  কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত করে এমপিও ভুক্তির দাবীতে এবং জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তির বিরোধীতা করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ স্যারের পদত্যাগের দাবীতে সংবাদ সম্মেলনকরে  বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের অনার্স -মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও  বঞ্চিত কুড়িগ্রাম জেলার শিক্ষক  নেতৃবৃন্দ।

আজ সোমবার (২২ জুন ২০২০) বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম, দিনাজপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মহাদেব শর্মা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান,  আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজে অনার্স- মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে নন এমপিও শিক্ষক, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কোভিড -১৯ মহামারীতে জনজীবন বিপর্যস্ত, সারাদেশে লকডাউন, স্কুল কলেজ বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটি কলেজ বাদ দিয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষকদের বেতন ভাতাও বন্ধ। এদিকে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়েজিত থাকার কারণে কারও নিকট হাত পাত্তেও পারছেন না। চিকিৎসা বাড়ি ভাড়া ,অন্ন বস্ত্র কেনার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই। সামনে ঈদ বিপাকে তারা। ধার মহাজন করে অনেকে চলছেন, বৃদ্ধ পিতা মাতা, ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে অবসরে গেছেন চোখের জল হাতে নিয়ে , অনেকে অবসরে যাবার পথে, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরব, নিষ্ঠুর , বোবা পাষাণ সীমারের ভূমিকায় মত্ত। তারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সাবজেক্ট অনুমোদন দিচ্ছেন, আর বলে দিচ্ছেন বেতন ভাতা দিবে কলেজ কর্তৃপক্ষ, বাহ: কী তাদের দ্বায়িত্বহীনতা!! সন্তান জন্ম দিবে একজন, ভরণ পোষণ করাবেন অন্যজন।

সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি -২০১০ এর উচ্চ শিক্ষা অধ্যায়-০৮, কৌশল -০৬ , এ বলা হয়েছে –’’ পর্যায়ক্রমে ডিগ্রি পাশ কোর্স তুলে দিয়ে ০৪ বছর মেয়াদী ডিগ্রি অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু করা হবে।” এটা যদি সরকারের পলিসি বা শিক্ষানীতি হয় তাহলে অনার্স কোর্সের শিক্ষকদেরকে কেন জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার বাহিরে রাখা হবে? কেন এমপিও ভুক্ত করা হবে না? একই নিয়ম ও পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিগ্রি (পাস ) ৩য় পদের শিক্ষকগণ এমপিও ভুক্ত হতে পারেন। একই যোগ্যতায় একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় করণের আওতায় ৩২০ কলেজের অধিকাংশ ডিগ্রি কলেজের অনার্স কোর্সের শিক্ষকগণ আতœীকরণের আওতায় প্রক্রিয়াধীন। তাহলে আমাদের অপরাধ কী? কেন আমরা এমপিওভুক্ত হতে পারবো না? একই কলেজে কেহ এমপিও ভুক্ত,কেহ ২৮ বছর ননএমপিও, একই বিষয়ে এ দ্বৈত্যনীতির অবসান চাই ।

জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবরে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছি, তিনি তা প্রত্যাখান করেছেন এবং দায়সারা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হতে ০৪/০৫/২০২০ তারিখে একটি নোটিশ দিয়েছেন, যেন কলেজ কর্তৃপক্ষ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের বেতন দেন, যে নোটিশে কারো স্বাক্ষর নেই, নাই স্মারক নং, কে কাকে দিল সেটা অস্পষ্ট। , তাই আমরা এ আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ডে প্রায় ২৫০০ (আড়াই হাজার) কোটিরও বেশি টাকা অলস পড়ে আছে। যে টাকা দিয়ে সারা দেশের অনার্স মাস্টার্সের ৫০০০ জন শিক্ষকের ১২ বছরের বেশি সময় ধরে বেতন ভাতা দেয়া সম্ভব। তিনি ধনকুবের সেজে বসে আছেন । তার অধি:নস্ত শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আমরা একাধিকবার বর্তমান ভিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করি, তিনি প্রতিবারে আমাদের অপমান, অসম্মান করে ,ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন, আর বলেছেন “তোমরাতো জেনেশুনে বিষ পান করেছো, চাকুরী ছেড়ে দাও।” তাঁর সম্মান রক্ষায় আমরা কিছু বলিনি। আমরা সম্মান জানিয়ে তাঁর নিকট আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলাম , যে আমাদের এমপিও না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষকদের বেতন ভাতা দেয়া হোক, আর তিনি যেন জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০১৮ তে অন্তর্ভুক্তির জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে এমপিওভুিক্তর বিষয়ে প্রাপ্ত পত্রের জবাব বা সুপারিশ বা তাঁর মতামত পেশ করেন। গত ২৩/০৩/২০১৪ খ্রি: তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয় হতে লায়লা আরজুমান্দ বানু উপসচিব ( বিশ্ববিদ্যালয় -২) স্বাক্ষরিত জনবল কাঠামো এবং এমপিও ভুক্তির বিষয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ২৩/০৭/২০১৭ খ্রি: তারিখে ওয়াহিদা মুসারত অনিতা , পরিচালক-৭ স্বাক্ষরিত ঐ একই বিষয়ে ভিসির মতামত জানতে পত্র ইস্যু করেন, কিন্তু পত্র পাওয়ার ০৫ (পাঁচ) বছর অতিক্রান্ত হলেও তিনি জবাব দেননি।

যেহেতু ভিসি স্যার আমাদের দায়দ্বায়িত্ব নিতে ব্যর্থ এবং জনবলকাঠামো সংশোধনীতিতে আমাদের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে ব্যথর্, তাই ভিসি ড. হারুন অর রশীদ স্যারের পদত্যাগ দাবী করছি। অচিরেই তার পদত্যাগ করা উচিৎ। আমরা সারা বাংলাদেশের শিক্ষকরা তার পদত্যাগের দাবীতে ঐক্যবদ্ধ আেন্দালন করছি এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুদৃষ্টি কামনা করছি।

আমাদের দাবী সমূহঃ
১) অনার্স মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত নন এমপিও শিক্ষকদেরকে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ তে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২) ৫০০০ জন শিক্ষকের জন্য ১৪৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে অতিদ্রুত অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদেরকে এমপিও ভুক্ত করতে হবে।
৩) বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের মানবেতর জীবন হতে কাটিয়ে উঠতে বিশেষ প্রনোদনা ঋণ ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাই।
৪) সর্বোপরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর রশীদ স্যারের পদত্যাগ চাই।

 সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত আছেন মোঃ মেহরাব আলী, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন জাহিদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, ফারিহা শারমিন মিতু, হবিবুর রহমান- সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি। মহাদেব শর্মা-জেলা আহ্বায়ক, দিনাজপুর জেলা এবং আরও উপস্থিত আছেন সাজ্জাদ হোসেন, আফতাবুজ্জামান, শহিদুল্লাহ্ সাদী, শফিউল আলম, তৌহিদুল ইসলাম, বন্দে আলী , শাহরিয়ার সাজু, রমজান আলী , মোস্তফা, আবু তাহের , সরদার মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার, স্বপন, নূর ইসলাম, কামরুন্নাহার, ফেরদৌসী, নূরে আলম সিদ্দীক রাজেশ, মিন্টু, কামরুজ্জামান, আলামিন, মন্জুরুল, রাশেদ, প্রমূখ। প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেন মহাদেব শর্মা ও হাবিবুর রহমান। আরও উপস্থিত আছেন বিভিন্ন উপজেলার প্রতিনিধি বৃন্দ ।

আমাদের বাণী ডট কম/২২  জুন ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।