মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী জেসমিন আক্তার ভালো ফলাফল করলেন। কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে জিপিএ ৪.২৮ পেয়েছে। তার সাফল্যের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার।

জেসমিন ছেংগারচর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ঠাকুরচর গ্রামের গরীব, অসহায়, প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের তৃতীয় মেয়ে। প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্য সংখ্যা- ৭জন। তার স্ত্রী ক্ষুদ্র ব্যবসা করে সংসার চালান। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় জেসমিন পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের স্কুল খরচ চালিয়ে সংসারে সহায়তা করতেন। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী জেসমিন আক্তার, পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে বিদ্যালয়ে যায়, সকল পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আসলেও তার প্রবেশপত্র আসেনি। কান্না-কাটি, হৈচৈ অতপর প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের দৃষ্টি গোচর হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। তারপরও জেসমিন ওই বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, খোজ নিয়ে জানা গেল জেসমিনের নবম শ্রেণীর রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। অথচ ২০১৭-২০১৮ সনে নবম ও দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালিন সময়ে বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করে সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়। এমনকি নির্বাচনী পরীক্ষায় সকল বিষয়ে কৃতকার্য হয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণও করে।

২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের স্মরণাপন্ন হয় জেসমিন। ফলে ইউএনও শারমিন আক্তার জেসমিনের পড়াশোনার খরচ’সহ যাবতীয় দায়িত্ব নেন। এমনকি মেয়ে হিসেবে জেসমিনকে গ্রহণ করে নেন।

সোমবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর জেসমিন আক্তার তার মাকে নিয়ে ইউএনও শারমিন আক্তারের কার্যালয়ে গেলে তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান। সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

জেসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ইউএনও মহোদয় যদি মায়ের মত আমাকে গ্রহণ না করতেন, তাহলে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতো। এমনকি আমার দরিদ্র পিতা সংসারের ঘানি টানতে না পেরে মানুষের প্ররোচনায় আমাকে বাল্য বিবাহ দিয়ে দিতেন। আমার আজকের ফলাফলের পেছনে মাতৃতুল্য ইউএনও মহোদয় কৃতিত্বের দাবিদার। আমি এ জন্য তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকব।

জেসিমন আরো বলেন, আমি ভবিষ্যতে সেনা বাহিনীর অফিসার হয়ে দেশ সেবায় অংশ গ্রহণ করতে চাই।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা আমার দায়িত্বের একটি অংশ। মেয়েটি ২০১৮ সালে পরীক্ষা দিতে না পেরে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে আমার আশ্রয় নেন। আমি তখন সকল বাঁধা উপেক্ষা করে পড়াশোনার খরচ’সহ যাবতীয় দায়িত্ব নেই।

তিনি জানান, জেসমিনের পিতা প্রতিবন্ধী। তাকে ভাতার ব্যবস্থা করি। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় তার মাকে ব্যবসার জন্য আর্থিক সহায়তা করি। বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।