ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের ফেসাডাঙ্গী ব্রিজের নিচে টাঙ্গন নদী থেকে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন। ঠাকুরগাঁও জেলা সর্ববৃহৎ এই ফেসাডাঙ্গী ব্রিজ। শহর থেকে প্রায় ৩-৪ কি.মি. দূরত্বে এই ব্রিজটি অবস্থিত। ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন নদী। আর এই ব্রিজের আশে-পার্শ্বে নদী থেকে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছে।
কিছুদিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম এর নির্দেশে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন টাঙ্গন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনলেও তা এখনো সম্পুর্ণভাবে বন্ধ হয়নি। বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অভিযান চলাকালে বালু ব্যবসায়ীদের মাঝে ভাটা পরে, অভিযানের কয়েকদিন পরেই আবার তাদের বালু উত্তোলনের জোয়ার শুরু হয়ে যায়।
এইভাবেই দিনে লোকচোক্ষুর আরালে ও রাতের আধাঁরে বালু উত্তোলনের জোয়ার-ভাটা চলছে ঠাকুরগাঁও ফেসাডাঙ্গী ব্রিজের আশে-পার্শ্বে। ড্রেজার মেশিন গুলো আশে-পার্শ্বের ভূট্টা ক্ষেতগুলোর ভিতরে লুকিয়ে রাখা হয় অনেক সময়। সরেজমিনে দেখা যায়, ৫-৬ টি শ্যালো যন্ত্র বসিয়ে পাইপ লাগিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাকে করে এসব বালু নদীর ওপর ও তার পার্শ্বে নির্মিত সড়ক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত এক ঘণ্টায় শুধু একটি ঘাট থেকে পাঁচ ট্রাক বালু নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এমন বালু উত্তোলনের ঘাট এখানে রয়েছে প্রায় ৬-৭টি। এক ট্রাক বালু ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন এ স্থান থেকে গড়ে ৪০-৫০  ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয় বলে স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন। অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার আশপাশের অনেক কৃষকের আবাদি জমি নদীতে বিলীন গেছে। এলাকাবাসী সূত্র জানা যায়, শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে কয়েক দিন বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। সুযোগ বুঝে তা আবার চালু করা হয়। তারা আরও জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালি ব্যক্তির দাপটে এভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। দীর্ঘদিন থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করার ফলে অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে নবনির্মিত এই ফেসাডাঙ্গী ব্রিজ, কৃষিজমি সহ আশে-পার্শ্বে বসবাসরত মানুষগুলো।
এবিষয়ে বালু উত্তোলনকারীদের কাছে জানতে চাইলে, কিছু না বলে তারা বিষয়টি এরিয়ে যান। এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।