ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়েতে শুকানো হচ্ছে ভূট্টা , এটা আর চালু হবে না। অনেক শুনেছি এই হচ্ছে, এই হবে। অনেক নেতা-মন্ত্রী আসছে। ঘুড়ে গেছে, কথা দিছে এবার হবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। আমরা গরীব মানুষ পাশেই বাসা। কাজ করে খাই। ভুট্ট আবাদ করেছি এখন ভূট্টা শুকাচ্ছি এখানে। কি আর করবো এটা তো আর কোনদিন চালু হবে। কমছে কম আমরা এই ভূট্ট শুকানোর কাজেই লাগাই।

মঙ্গলবার দুপুরে কেন এই বিমান বন্দরের রানওয়ে তে ভূট্ট শুকাচ্ছেন এমনি এক প্রশ্নের জবাবে কথা গুলো বললেন ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর এলাকার এক কৃষক আব্দুল বাসেদ। কথাটি শুনে খারাপ লাগলেও তাকে উত্তরে বলার মতো কিছু ছিলোনা। শুধু আব্দুল বাসেদ নয়,এমন আরো অনেক কৃষকেই তার জমির ভূট্টা এনে শুকাচ্ছেন এই বিমান বন্দরের রানওয়ে তে।

উত্তরের অবহেলিত জেলা গুলির মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম। ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠা একটি বিমানবন্দর যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু-বার বন্ধ হয়ে যায়। ঠাকুরগাঁও বাসীর দীর্ঘ দিনের চাওয়া ছিল ঠাকুরগাঁও বিমাবন্দরটি পুনরায় চালু করা হোক। কিন্তু চাওয়া শুধু চাওয়া রয়ে গেলো। বর্তমানে সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে ভুট্টা শুকানোর কাজে। সরকারদলীয় অনেক এমপি মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে ঠাকুরগাঁও এসে এখানকার মানুষদের আশ্বাস দেন এ বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে। ইতিপূর্বে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হলেও তেমন কোন ফল পাওয়া যায়নি। গত বছরের শুরুর দিকে বর্তমান সরকারের পর্যটন ও বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন দু দফায় ঠাকুরগাঁও এসে বিমানবন্দর পরিদর্শনকালে একটি জনসভায়ও যোগদেন তিনি। সভায় বিমানবন্দরটি ৬ মাসের মধ্যে চালুর প্রতিশ্রুতি দেন ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষকে। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী এসে বিষয়টি চুরান্ত করবেন।

অবশেষে জনগন আশার পথ চেয়ে থাকে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঠাকুরগাঁও জেলায় আগমনের জন্যে। কিন্তু গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জেলায় নানা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন হলেও বিমানবন্দরটির ব্যাপারে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আর তাই আবারো বিমানবন্দরটি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ। এর পরেও আশায় আছেন অনেকেই। জানা যায়, দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিশেষ কৌশল প্রয়োগের জন্য ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকার সাড়ে ৫শ একর জমির উপর স্থাপিত হয় এ বিমানবন্দরটি। যার রানওয়ে ছিল ৩ টি এবং এতে সাব- রানওয়ে ছিল ১০ টি। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে এ বিমান বন্দরটিকে ‘আর্মি স্টেট’ হিসেবে ঘোষনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিভিল এ্যাভিয়েশন বিভাগ আরো ১১০ একর জমি বর্ধিত করে সেখানে বিমানবন্দরের বর্তমান স্টল ভবন নির্মান ও রানওয়ে বর্ধিত করে এবং বিমানবন্দরটি চালু করে। সে সময়ে সামগ্রী পরিবহনসহ জরুরী কাজে এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করা হতো।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিল এবং ওই সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান সার্ভিস চালু ছিল। এরপর আবারো বন্ধ হয়ে যায় এটি। ১৯৮০ সালের দিকে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্দোগ নেওয়া হলে কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন নির্মান ও বিদ্যুতায়ানের কাজসহ রানওয়ে মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে আর চালু করা হয়নি। দীর্ঘ কয়েক যুগ বন্ধ থাকার পরে বর্তমানে এটি সেনাবাহিনির লার্নার ড্রাইভারদের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মানুষদের সৈয়দপুর বিমানবন্দরে গিয়ে বিমানে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে আর্থিক ও শারিরিক দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয় এ দু জেলার মানুষ। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমানের টিকিট বুকিং দেওয়ার জন্য এখানে রয়েছে ৪/৫টি বুকিং এজেন্সি। এদের মধ্যে রয়েছে মাহিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, টাঙ্গন এয়ারলাইন্স, এস এস ট্যাভেলস এন্ড ট্যুরস, জয় এয়ারলাইন্স। এ এজেন্সি গুলি থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন যাত্রী দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের টিকিট গ্রহণ করেন এ জেলার মানুষ। বিমানবন্দরটি চালু হলে এসব যাত্রিদের সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে যেতো বলে মনে করেন ভুক্তোভোগীরা।

এস.এস ট্যাভেলস এন্ড ট্যুরস এর পরিচালক রফিকুল ইসলাম রোহান জানান, যেহেতু আমাদের এ অ লটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এবং বাংলাবান্দা চেকপোষ্ট আমাদের খুব কাছেই। তাই বিমানবন্দরটি চালু হলে আমাদের এ অ লে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হত যা আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি বড় অবদান রাখতো।

ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী জানান, আমাদের এখানে বড় কোন কিছু ছিল না যা নিয়ে আমরা বাহিরে গল্প করতে পারতাম। প্রধানমন্ত্রী এবার অনেক কিছুই দিয়েছেন যা এ জেলার চেহারা পাল্টে দেবে তবে বিমানবন্দরটিও তিনি দিতে পারতেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। সব চাওয়া তো আর একবারে পূরন করা সম্ভব হয় না। আশা করি আগামিতে আমরা বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারে ভালো সংবাদ পাবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।