ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসের সহকারি পরিচালকের নির্দেশে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছে দালালরা; এতে চরম ভোগান্তিতে লাইসেন্সধারিরা। ঠাকুরগাঁও বিআরটিএতে পদের সংখ্যা কর্মচারী ও কর্মকর্তা ৮ জন। এর বিপরীতে ২জন কর্মকর্তা ও ২জন কর্মচারী রয়েছে। আর বহিরাগতরাসহ কাজ করছে প্রায় ১০-১১ জন। জানা যায়, বহিরাগতদের মধ্যে ৩ জন দিনাজপুর থেকে বিআরটিএ অফিসে এসে কাজ করেন। এদের মধ্যে ২জন হলো সহকারি পরিচালকের স্বজন। একজন হচ্ছে সহকারি পরিচালকের ভাই ‘নূর জামান’ ও আরেকজন হলো তার মামা ‘রেজাউল’। তারা অফিস চলাকালীন সময়ে অধিকাংশ কার্য দিবসে দিনাজপুর থেকে ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসে এসে কাজ করেন।

অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কেউ সময় মতো লাইসেন্স পাচ্ছেন না অভিযোগ করে বলেন লাইসেন্স করতে আসা অনেক মানুষ।

অন্যদিকে জেলা বিআরটিএ সহকারী পরিচালক এর নির্দেশেই বহিরাগতরা অফিস রুমে প্রবেশ করে সকল কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানা যায়। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে হঠাৎ দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা মো. আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ’তে অভিযান চালায়। এসময় দুদকের সহকারী পরিচালক ওবায়দুর রহমানসহ, উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান ও কর্মকর্তা শাহজাহান আলী অভিযানে অংশ নেন। মঙ্গলবার দুপুরে দুদক এ অভিযান চালিয়েছে। এসময় দালাল চক্রের একজনকে গ্রেফতার করেন দুদক। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি শামসুর রহমান রুবেল এর বাসা জেলা শহরের আশ্রমপাড়ায়।
কিন্তু তা সত্তে¡ও কয়েকদিন পরেই আবার শুরু হয় এই দালাল চক্রের উৎপাত ।
এদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া থানার চাপাতি গ্রামের আসরাফুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএর অফিসার গাড়ির কাগজ করার জন্য আমার কাছ থেকে ৭শত টাকা নিয়েছে কিন্তু টাকা প্রদানের কোনো রশিদ আমাকে দেইনি।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি কয়েক দিন আগে লাইসেন্সের জন্য অফিসের এক ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি এখন তাকে পাচ্ছি না। কে দালাল আর কে অফিসের লোক আমরা তো জানি না। অফিসের ভেতরে যে থাকে তাকেই আমরা অফিসের লোক মনে করছি এটাই স্বাভাবিক।

এছাড়াও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, রেজিষ্ট্রেশন বলেন আর ড্রাইভিং লাইসেন্স বলেন কোনোটাই টাকা ছাড়া মিলে না এ অফিস থেকে। আর এসব সহকারী পরিচালকের নির্দেশেই হয় বলে অভিযোগ তাদের। টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। সরকার অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করলেও এসব অফিসারের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিআরটিএ ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় সার্কেলের সহকারী পরিচালক ফারুক আলম জানান, আমরা কাগজপত্র জমা নেয়ার পরেই তা পাঠিয়ে দেই আসতে দেরি হলে আমাদের কি করার। আর বহিরাগতরা স্থানীয় লোকজন ও বিভিন্ন কলেজ পড়–য়া কয়েক জন ছাত্র এসে অফিসের রুম ঝাড়– দেয় এতে করে অনেক সময় অনেকের ফরমগুলো পূরণ করে দেই তার জন্য তারা খুশি হয়ে তাদেরকে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য হয়ত কয়েক টাকা দেয় বলে জানান তিনি। এখানে গাড়ির কাগজ করতে বা ড্রাভিং লাইসেন্স করতে কোনো মানুষ হয়রানি হচ্ছে না। তবে তার কোনো স্বজন এখানে এসে কাজ করার বিষয়টি ও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকদের হেউপ্রতিপূর্ণ ও কটাক্ষ করে বলেন, আমাদের দেশে ছোট ছোট পান দোকানদারের কাছে এই সাংবাদিকরা যায় কিন্তু বড় বড় রাঘোব বোয়ালদের ধারের কাছেও ক্যামেরা নিয়ে যান না সংবাদিকরা।

এদিকে অনুসন্ধান টিমের গোপন ক্যামেরায় ধরা পরে ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসের ভিতরের এক ব্যক্তি গাড়ির কাগজ জমা দিলে তার কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে অফিসে কর্মরত একজন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।