নীলফামারীর  সৈয়দপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপত্তি পাঠানোর অভিযোগ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে শহরের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করেন মো. নুরুল আলম নওশাদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ক’ তালিকাভুক্ত আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা গত ১২ নভেম্বর যাচাই বাছাই করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তিন সদস্যের যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি হলেন সৈয়দপুর উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক, সদস্য সচিব স্থানীয় ইউএনও এসএম গোলাম কিবরিয়া (বর্তমানে রেল মন্ত্রণালয়ে কর্মরত) ও সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক। চুড়ান্ত যাচাই বাছাইয়ের ওই দিনে আমি আমেরিকার অবস্থান করায় আমার স্ত্রী প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন।

এ সময়ে কমিটির সদস্যবাদেও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। সেদিন বাছাই কমিটি প্রামাণ্য কাগজপত্র যাচাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার নাম তালিকাভুক্ত করে। পরবর্তীতে সভার কার্যবিবরণীতে সভাপতি একরামুল হক উল্লেখ করেন আমার স্ত্রী যাচাই বাছাই কমিটির সামনে কোন প্রকার কাগজপত্র উত্থাপন করতে পারেননি উল্লেখ করেন এবং আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য কলামে লিখে তা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পত্র প্রেরণ করা হয়।

তিনি বক্তব্যে আরো বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের একজন মাসিক বেতনভুক্ত কর্মকর্তা হিসাবে যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। তাছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় আমি রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের কাটাখালি ব্রীজে পাক সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে চরম নির্যাতনের শিকার হই। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে সেখান থেকে ভারতের কুচবিহারে যাই। এরপর সেই সময়ের কর্তৃপক্ষ মেডিকেল আনফিটের কারণে আমাকে হলদীবাড়ী ইয়ুথ ট্রানজিট ক্যাম্পে ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগ দেয়। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি ১৯৭১ সালের জুন মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পালন করি। পরে দেশে ফেরার ছাড়পত্র দেয় হলদীবাড়ী রিসিপশন ক্যাম্পের ইনচার্জ তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মরহুম আজহারুল ইসলাম।

এছাড়াও আমার দায়িত্ব পালনে সন্তুষ্টি হয়ে প্রশংসা পত্র দেন নীলফামারী মহকুমা (বর্তমানে জেলা) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জোনাব আলী উকিল, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সেই সময়ের সহসভাপতি মতিউর রহমান এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দপুরের কৃতি সন্তান মরহুম আলীম উদ্দিন। অপরদিকে আমি ৭১ সালে ভারতে তালিকাভুক্ত একজন শরণার্থী ছিলাম সেই রেজিস্ট্রেশন কার্ডও রয়েছে। আমার স্ত্রী ওইসব তথ্য যাচাই বাছাই কমিটির সামনে উপস্থাপন করেন। তারপরও বাছাই কমিটির সভাপতি একরামুল হক আমার কাছে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে অমুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করে আমার মত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ও কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জিকরুল হক, সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা সামসুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা জিকরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বীরপ্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা হাতেম কাজী, মুক্তিযোদ্ধা আব্বাছ আলী, মুক্তিযোদ্ধা আলিম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা সালাহউদ্দিন বেগ, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মো. এজাবুল হক প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা জানান, যাচাই বাছাই কমিটির বাছাই সময়ে আমরাও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। অভিযোগকারী নূরুল আলম নওশাদকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনাক্ত করি। তারপরও বাছাই কমিটির সভাপতি একরামুল হক আর্থিক সুবিধা না পেয়ে তার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পত্র প্রেরণ করে। অথচ তিনি (একরামুল) আর্থিক সুবিধা নিয়ে কয়েকজন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকায় নামভূক্তি করেছেন। যা পুরোপুরি ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। তাই আমরা বাছাই কমিটির সভাপতির অপকর্মের বিচারসহ প্রেরিত তালিকা সংশোধন করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম নওশাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধার পুনঃ যাচাই বাছাইয়ের সময় তার স্ত্রী উপস্থিত থেকে বলেন তিনি (স্বামী) আমেরিকা প্রবাসী। এই মুহূর্তে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণপত্র আমার কাছে নেই। তার স্ত্রীর ওই মন্তব্যের ভিত্তিতেই তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।