দিনাজপুর জেলা সংবাদদাতা; জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজারে পৌঁছেছে। সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুহার সদর উপজেলায়। জেলার ১৩ টি উপজেলায় যে পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে তার প্রায় ৪২ শতাংশই সদরের। এই উপজেলার মৃত্যুহার ২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বাকি ১২টি উপজেলার মৃত্যু হার যেখানে গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। যা মোট মৃত্যুহারের ৭৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৯ জুলাই) এই জেলায় সর্বোচ্চ মোট ৫২ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এ নিয়ে এই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৫৩৩ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৪ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে সদরে, ৬৩৮ জন আক্রান্ত এবং ৯ জন মৃত। বাকি ১২ উপজেলায় আক্রান্ত ৮৯৫ জন এবং মারা গেছেন ২৫ জন।

সদর উপজেলায় আক্রান্তের হার ৪১ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই উপজেলায় সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও কম। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৪৪ জন। যা সুস্থ্যতার হারে ৫৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। যেখানে সারা জেলায় এ হার ৬২ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন হাকিমপুর উপজেলায়। মারা যায়নি একজনও। স্থানীয় সংসদ সদস্য, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে ‘নো মাস্ক নো সেল’ কর্মসূচি এখনও চলছে। একইসঙ্গে আইন অমান্যকারীদের বহনকারী যানবাহনের জরিমানাও করার নির্দেশনা রয়েছে এ উপজেলায়।মাস্ক পরা ছাড়া কোনও ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করলে সে দোকান এক থেকে সাত দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে এই উপজেলায় করোনার সংক্রমন তেমন একটা নেই।

দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৬৩৮ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩৪৪ জন, মারা গেছেন ৯ জন। বিরলে আক্রান্ত ৮৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ৬৩ জন, মারা গেছেন ২ জন। বিরামপুরে আক্রান্ত ১৭৩ জন, সুস্থ হয়েছেন ১০৮ জন, মারা গেছেন ২ জন। বীরগঞ্জে আক্রান্ত ৪৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ২৭, মারা গেছেন ৩ জন। বোচাগঞ্জে আক্রান্ত ২৭ জন, সুস্থ হয়েছেন ২২, মারা গেছেন ২ জন।

চিরিরববন্দরে আক্রান্ত ৯০ জন, সুস্থ হয়েছেন ৬৮ জন, মারা গেছেন ৫ জন। ফুলবাড়িতে আক্রান্ত ৬১ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩৬ জন, মারা গেছেন ৫ জন। ঘোড়াঘাটে আক্রান্ত ৭০ জন, সুস্থ হয়েছেন ৬০ জন, এই উপজেলায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। হাকিমপুরে আক্রান্ত ২৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ১১ জন, এই উপজেলাতেও কোনও মৃত্যু নাই।

কাহারোলে আক্রান্ত ৫৮ জন, সুস্থ হয়েছেন ৪৬ জন এবং মারা গেছেন একজন। খানসামা উপজেলায় আক্রান্ত ৬০ জন, সুস্থ হয়েছেন ৫৩ জন, মারা গেছেন একজন। নবাবগঞ্জে আক্রান্ত ৭৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ৪৮ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। পার্বতীপুরে আক্রান্ত ১২৮ জন, সুস্থ ৬৯ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।

এখন পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে পাঠানো নমুনার সংখ্যা ১০ হাজার ৪৮৬ টি। যার মধ্যে ফল এসেছে ১০ হাজার ৩৩৮ টির। হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ১৭ হাজার ১৮০ জন।

দিনাজপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, করোনা সংক্রমন ঠেকাতে সর্বক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতার কোনও বিকল্প নাই। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে এই ভাইরাসের প্রভাব রোধ করা সম্ভব। সদর উপজেলা জেলার প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় লোকসমাগম বেশি। তাই সেখানে সংক্রমনও বেশি। হাকিমপুর উপজেলা মতো ‘নো মাস্ক নো সেল’ কার্যক্রম সবখানে চালু করা গেলে সংক্রামন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

দিনাজপুর করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। তবে সংক্রামন ঠেকাতে জনগনের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিন, ব্যবসায়ীসহ সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২৯ জুলাই ২০২০), দেশে গত করোনাভাইরাসে আরো ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৩ হাজার ৯জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২ লাখ ৩২ হাজার ১৯৪ জন। আর মোট মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৫ জন। আজ নমুনা পরীক্ষাকরা হয়েছে ১৪১২৭টি।গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছে ২ হাজাআর ৮৭৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯২ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/২৯ জুলাই ২০২০/পিপিএম

ঈদের বিজ্ঞাপন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।