ছবি কথা বলে। কথা বলে সুখ, দুঃখ, হাসি ও কান্নার। বলে জীবনের পাওয়া না পাওয়ার কষ্টের কথা। ছবিটিতে বৃদ্ধ মায়ের মুখে চামচে করে খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন তার ছেলে।

ছেলেটির দুটি হাত নেই। তাতে কি? মুখ তো আছে। আর সেই স্বম্বলকে পুঁজি করে জীবনে পাওয়া না পাওয়ার কষ্ট তুচ্ছজ্ঞান করেছেন চীনের চেন জিনিন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি।

চীনের দক্ষিণ পশ্চিমের চঙ্কিংয়ে মাকে নিয়ে বাসা করেন তিনি। মাত্র সাত বছর বয়সে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার হয়ে দুই হাত হারায় চেন। সেই তখন থেকেই চেনের দুই হাত ছাড়া জীবন চালানোর লড়াই শুরু। মাঠে কাজ করা, রান্না করা এমনকি মাকে খাওয়ানো সবই করছে সে। এছাড়াও বাড়ির সব ধরণের কাজেও পারদর্শী অসামান্য এই ব্যক্তি।

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে সন্তানই তার শেষ আশ্রয়। বাবা-মা যেমন সন্তানকে ছোট থেকে বড় করে তোলে। ঠিক তেমনই বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাও তার সন্তানের কাছে সেই ছোট শিশুর মতই হয়ে যায়।

কারণ এসময় তারা বয়সের ভারে মূহ্যমান হয়ে পড়েন। তাই সন্তানদের উচিত বৃদ্ধ বয়সে তাদের সেবা যত্নে অবহেলা না করা। অনেকেই আছেন যারা বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতেও পিছপা হন না। তাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই চেন।

প্রতি বছরই চেনের ৯৬ বছর বয়সী মা ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ২০১৫ সালে তার মা প্যারালাইজড হয়ে যান। হাত পর্যন্তও নড়াতে পারেন না তিনি। এরপর থেকেই বিছানায় তার জীবন কাটছে।

অন্যদিকে, ছেলে চেনের দুটি হাত না থাকা সত্ত্বেও মায়ের দেখাশুনার কমতি রাখেন না তিনি। বিগত ৩৩ বছর ধরে প্রতিদিন মুখ দিয়ে চামচের মাধ্যমে বৃদ্ধ মায়ের মুখে খাবার তুলে দেন চেন। মায়ের জন্য তিন বেলায় খাবার রান্না করেন তিনি।

শারীরিক বাধা পেরিয়ে চেন আজো জীবন যুদ্ধ জয় করতে ব্যস্ত। তার বয়স যখন ১৪ ঠিক তখন থেকেই কৃষি কাজ শুরু করে সে। সঙ্গে মহিষ ও ছাগল পালন করতে থাকেন চেন।

২০ বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। সংসারের হাল টেনে ধরেন তার মা। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হতে থাকে পুরো পরিবার। মাকে দেখা শোনা না করে অন্য ভাই বোনেরা পরিবার থেকে সরে যান একে একে।

তবে মায়ের ভালবাসা ছেড়ে কোথাও যায়নি চেন। তিসি বসে না থেকে মাকে সাহায্য করার জন্য রান্না করা শিখেন। পা দিয়েই গৃহস্থলির সব কাজ করার অভ্যাস গড়েন। এখন তিনি পা দিয়েই সবজি কাটা, রান্না করা, চুলা জ্বালানোসহ সবকিছুই করতে পারেন। এমনকি ক্ষেত থেকে ভুট্টা সংরক্ষণ এমনকি বাড়ি এনে সেগুলো থেকে বীজ সংরক্ষণও করেন এই সাহসী যোদ্ধা।

নিজের ক্ষেতে চাষাবাদও করছেন তিনি একা। তার রয়েছে ২৪টি ছাগল, দুইটি মহিষ ও চারটি মুরগি। প্রতিবছর লাভের অঙ্কটাও বেশ বাড়াচ্ছেন চেন। তবে শীতকালে দুই পা দিয়ে কাজ-কর্ম করতে বেশ কষ্ট হয় চেনের।

এলাকাবাসীরা অবশ্য চেনকে বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে বলেন। তবে নারাজ চেন। তার মতে, আমার হাত দুটি নেই তাতে কি? আমার সুন্দর দুটি পা রয়েছে।

মাকে নিয়ে তার চিন্তার যেন শেষ নেই। বাড়িতে না থাকার সময় মায়ের যদি কিছু প্রয়োজন পড়ে কিংবা তার শরীর যদি খারাপ হয়ে পড়ে! এসব ভেবে প্রতিবেশীদের সাহায্য নেন চেন। কিছুক্ষণ পরপর তার মাকে দেখে রাখার জন্য প্রতিবেশীদের অনুরোধ করেন তিনি। সূত্র: ডেইলিমেল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।