বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ কেন্দ্র শেখহাটি যশোর ও ঝিনাইদহের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারের দুর্ণীতিবাজ চার কর্মকর্তার ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল কাদের এখন নানা বিধ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ চার কর্মকর্তারা হলেন, কৃষিবিদ আমিন উল্লাহ, কৃষিবিদ তপন সাহা, কৃষিবিদ ইন্দ্রজিৎ শীল, কৃষিবিদ আক্তারুজ্জামান।

একটি সূত্র জানায়, ঝিনাইদহের দত্তনগর খামারের আওতাধীন গোকুল নগর বীজ উৎপাদন খামার থেকে উৎপাদিত ১১৭ দশমিক ২৬০ মেট্রিকটন ও পাতিলা বীজ উৎপাদন খামার থেকে উৎপাদিত ৬৯ দশমিক ৫০০ মেট্রিকটন মোট ১৮৬ দশমিক ৭৬০ মেট্রিকটন এস এল-৮ এইচ জাতের হাইব্রীড ধান বীজ যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই দপ্তরের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল কাদের দেখতে পান সরকারের কর্মসূচির বাইরে অতিরিক্ত ১২৯ দশমিক ২২০ মেট্রিকটন বীজ উপপরিচালক ও সহকারি পরিচালক অবৈধ ভাবে সংরক্ষন করেছেন।

বিষয়টি তখন উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল কাদেরের চিঠির মাধ্যমে সদর দপ্তরের সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান ) কে জানিয়ে দিলে বিএডিসির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগন নড়েচড়ে বসেন। বিএডিসির জিএম (বীজ) নুরুন নবী সরদার ও অতিরিক্ত মহা-ব্যবস্থাপক (খামার) তপন কুমার আইচ ঝিনাইদহের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামার পরিদর্শন করেন।

খামারের সাথে সংশ্লীষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারিগণ অভিযোগ করেন পাতিলা ও গোকুল নগর বীজ উৎপাদন খামার থেকে অতিরিক্ত প্রায় ১৩০ মেট্রিকটন এস এল-৮ এইচ জাতের হাইব্রীড ধানের বীজ অসৎ উদ্যেশ্যে যশোরের শেখ হাটি বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ কেন্দ্রে মজুত করা হয় । এগুলোর সরকারি হিসাব না থাকায় বিক্রিত অর্থ আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা ছিল, এবং যুগ-যুগ ধরে এই অসাধু দুর্ণীতির বানিজ্য চলে আসছিলো। এই দুর্ণীতির বিষয়টি আগষ্ট মাসে সকল মিডিয়া ও পত্রিকায় বহুল প্রচারিত ও আলোচিত হয়েছিলো।

ওই সূত্রটি আরও জানায়, খামারের বীজ উৎপাদনের সময় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় কম। খামারের দুর্ণীতি কর্মকর্তাগন এর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বীজ উৎপাদন করে তা এভাবেই সরকারের ঘরের বাইরে বানিজ্য করে। এবার বিষয়টি জানা জানি হলে বিএডিসি কর্মকর্তাদের মাঝে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে যশোর বিএডিসির বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ কেন্দ্র যশোরের উপ-সহকারি

পরিচালক আব্দুল কাদের চলতি বছরের জুলাই মাসে দুর্ণীতিবাজ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সদর দপ্তরের সদস্য পরিচালক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ণীতিবাজ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুর্ণীতি দমন কমিশনে বিষয়টি বর্তমানে তদন্তধীন রয়েছে

। অভিযোগকারি উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল কাদেরর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, বিএডিসির ওই দুর্ণীতি বন্ধ হওয়ার কারনে তাকে শায়েস্তা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন দুর্ণীতিবাজ ওই চার কর্মকর্তা। তারা প্রাণ নাশের হুমকি, একের পর এক বিভিন্ন স্থানে বদলিসহ নানা হয়রানি করে চলেছেন। তিনি আরও জানান, অভিযোগের এক মাসের মধ্যে তাকে যশোর হতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বিএডিসি এবং পরে দুই মাসের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়। ঐ এলাকায় দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাগনের বাড়ি হওয়ায় ওই স্থানে তিনি চাকুরি করতে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

এসকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ও কৃষিখাতকে দুর্ণীতি মুক্ত করতে দুর্ণীতিবাজদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএডিসির চেয়ারম্যান, কৃষিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।