ঝিনাইদহের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দেব ও ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত কমিটির দ্বারা প্রমাণিত হলেও তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।

নিয়মানুসারে প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারি যদি কোন অপরাধে দণ্ডিত হন বা তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন তবে সেই কর্মচারি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। কারণ দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা/২০১৮(চ) ধারা মোতাবেক তার নৈতিক স্খলন ঘটে। কিন্তু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দেব ও ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ওই ধারায় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে তারা বহাল তবিয়তে চেয়ারে বসে আছেন। অবশ্য তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন অর্থ ঢেলে শাস্তি রোধ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ শিক্ষা কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার দেবের বিরুদ্ধে পত্রিকায় আর্থিক অনিয়ম ও নানাবিধ বিষয়ে সংবাদ প্রচার হলে তার প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনার পরিচালক সরেজমিনে তদন্ত করে অনুমতি/বরাদ্দ ব্যতিরেখে রেস্ট হাউজে বসবাস/অবস্থান, অনুমোদন ছাড়া সম্মানি গ্রহণ ও এমপিও প্রদানের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত হয়রানির প্রমাণ পান। এই সকল বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর চলতি বছরের ৩ তারিখে ৩৭.০২.০০০০.১০৬.২৭.০০১.১৫.৭০৭ স্মারকে সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত একটি পত্র দিয়ে সুশান্ত কুমার দেবকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য চিঠি দেন।

এরপর প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হলেও তার বিরুদ্ধে অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্যদিকে অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুজ্জামানের বিরুদ্ধে নীতিমালা বর্হিভূতভাবে ছাত্র ভর্তির অভিযোগ তদন্ত করতে সরেজমিন আসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনার পরিচালক প্রফেসার ড. হারুন অর রশিদ।

তদন্তে বিদ্যালয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ভর্তির প্রমাণ পায়। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালার অনুচ্ছেদ ১৫,৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার শিক্ষা ভবনে জমা দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়ে সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেয়া হয়। যার স্মারক নং-৩৭.০২.০০০০.১০৬.২৭.০০৫.১৯.৪০৬, তারিখ ৮ আগস্ট, ২০১৯।

এখানেও প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মচারি কোন অপরাধে দণ্ডিত হন বা তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে উক্ত কর্মচারি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা/২০১৮(চ) ধারা মোতাবেক তার নৈতিক স্খলন ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

অথচ সরকারি এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দোষ প্রমাণিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার কচ্ছপ গতিতে অভিযোগকারীরা হতাশ। সরকার প্রধান যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর এবং জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদের ঘোষাণা দিয়েছেন, তখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের স্বচ্ছতা ও আইনি প্রয়োগ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।